লালচে হলুদ সুন্দরবন

সুন্দরবনের কটকা এলাকায় গেওয়া-গরানগাছের বুনো পরিবেশে একদল হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১ মে
সুন্দরবনের কটকা এলাকায় গেওয়া-গরানগাছের বুনো পরিবেশে একদল হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১ মে

সুন্দরবন পত্রঝরা বনের মতো নয়। যখনই এ বনে যাই, শুধু সবুজটাই চোখের সামনে ভাসে। মাইলের পর মাইল নদী-খালের ভেতর দিয়ে ভ্রমণটা প্রায় একই রকম। তবে বছরের একটা সময় এ বনটাকে পাওয়া যায় একেবারেই অন্য রকমভাবে। সময়টা হয় মাত্র দু-তিন সপ্তাহের!

https://10ms.io/cwDayy
বিজ্ঞাপন

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এক অন্য রঙের সুন্দরবনের দেখা মেলে। এ সময় ঝড়ের মৌসুম। প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে বনের ভেতর টেকা বেশ অস্বস্তিকর। বনজীবী বা জেলেরাও এ মৌসুমটাতে সুন্দরবন এড়িয়ে চলেন। পর্যটকেরা তো যান না বললেই চলে। কিন্তু এ সময় পুরো বনের সৌন্দর্য হয়ে যায় লালচে হলুদ। বিশেষ করে গেওয়া আর গরানগাছের আধিক্য যে অঞ্চলে বেশি, সে এলাকায় এ রংটা বেশি চোখে ধরা পড়ে। গেওয়া পাতা লালচে আর গরান পাতাগুলো হয়ে পড়ে হলুদ। মাত্র অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পাতাগুলো খসে পড়ে পুনরায় সবুজ পাতা গজায়।

https://10ms.io/rwDoSb
বিজ্ঞাপন

কেন এ গাছগুলোর পাতার রং পরিবর্তন করে। মূলত গেওয়াগাছের কারণেই এমনটা হয়। এটি একটি পত্রঝরা গাছ। মে মাসের শুরুতে সব গেওয়াগাছের পাতার রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। প্রথমে হলুদাভ, তারপর লালচে। এ সময় পত্রবৃন্তে অ্যাসিটিক অ্যাসিড জমা হলে পাতাগুলো খসে পড়ে যায় মাটিতে। তবে গরানের পাতা খসে পড়ে না। গাছটির পুরো পাতা হলদেটে রং হয়ে যায়।

এই দুই গাছের পাতার কম্বিনেশন সুন্দরবনকে করে তোলে খুবই আকর্ষণীয়। মে মাসের মাঝামাঝি এসব গাছে আবার নতুন পাতা গজায়। তখন পুরো বনটা নতুন সবুজে সাজে। সঙ্গে ফুলও ফোটে গাছে গাছে। ফুলে ফুলে মৌমাছিরা ঘুরে বেড়ায়। এরই মধ্যে ভরা বর্ষা মৌসুম চলে আসে। মৌয়ালিরা মধু সংগ্রহ করতে নেমে পড়েন।

তীব্র গরমের ভেতর এ রকম এক সুন্দরবন দেখা সত্যিই সৌভাগ্যের। সুন্দরবনে প্রায় অর্ধশতবার যাওয়া হয়েছে আমার, বন্য প্রাণীর গবেষণাকাজে। কিন্তু এর আগে এই সময়টাতে কখনোই যাওয়া হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে ৮ মে সুন্দরবনের উদ্দেশে মোংলা থেকে বোটে উঠলাম। মে মাসের ১০ তারিখ একটা বড় ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল মোংলা থেকে ধীরে ধীরে কটকা পর্যন্ত যাব। কিন্তু বড় ঝড়ের কারণে প্রথম দিনই একটানা ১০ ঘণ্টা চালিয়ে কটকা চলে গেলাম। যেন সুন্দরবনের নিচের অংশে কাজ করে আবার ওপরে উঠে আসতে পারি তাড়াতাড়ি।

১০ মে সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি। প্রায় অর্ধেক দিন একটানা বৃষ্টি হলো। সুন্দরবন প্রায় জনমানবশূন্য। প্রকৃতির ডাক ছাড়া আর কোনো আওয়াজ পাই না। দুপুরের পর চিন্তা করলাম ভিন্ন ধরনের এক অভিজ্ঞতা নেব। কটকা থেকে কচিখালী হেঁটে যাব। এ রকম অভিজ্ঞতা খুব কম মানুষেরই আছে। হেঁটে গেলে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *