ইলিশে সুখবর আনল বৃষ্টি, আরও ধরা পড়ার আশা
‘গরম গরম ভাজা খিচুড়ির সঙ্গে,
বর্ষাকালে হর্ষে গালে তোলে লোকে বঙ্গে।
কাঁচা ইলিশের ঝোল কাঁচা লঙ্কা চিরে,
ভুলিবে না খেয়েছে যে বসে পদ্মাতীরে।’
এবারের বর্ষায় তেমন বৃষ্টিই হয়নি। এমনকি বর্ষাকালে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে খরা। খরা লেগেছিল ইলিশেও। উৎপাদন ছিল কম। দাম ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেজির ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। বৃষ্টিহীন বর্ষায় তাই হর্ষে বা আনন্দে খিচুড়ির সঙ্গে গরম গরম ভাজা গালে তোলার স্বাদ অনেকেই পাননি। রসরাজ অমৃতলাল বসুর ইলিশ নিয়ে এ মজার ছড়ার প্রকৃত রস তাই আস্বাদন করা যায়নি।
এই অনাবৃষ্টিই ইলিশের আকাল বয়ে এনেছিল—এ কথা ইলিশ ধরার সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকা মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের। গবেষকরাও বলছেন একই কথা। তবে এখন প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। বেশি বৃষ্টি হয়েছে উপকূলের জেলাগুলোয়।
এর পরপরই ইলিশ ধরা পড়ছে অনেক। অন্তত যে খরা পড়েছিল, তার চেয়ে তো অনেক বেশি বলতেই হবে। আর উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমেছে এ ‘রুপালি শস্যের’।
বরিশালের জেলা মৎস্য অফিসের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে একটি হিসাব দেন গতকাল বুধবার। নদী থেকে ধরা এক কেজি বা এর বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছিল ৪৮ হাজার টাকায়। এক সপ্তাহ আগেই এর দাম ছিল ৫৬ হাজার টাকা। আর ৭৫০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম প্রতি মণ ৪১ হাজার টাকা।
তবে সাগর থেকে ধরা এক কেজির ইলিশের দাম প্রতি মণ ৩২ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এর দাম ৪২ হাজার টাকা ছিল এক সপ্তাহ আগেও। বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ইলিশের সরবরাহ একেবারে কমে গিয়েছিল। বরিশাল মৎস্য আড়তে প্রায় দেড় হাজার মণ ইলিশ আসছে। এটা একেবারে অর্ধেকেরও কম ছিল সপ্তাহখানেক আগে।
তবে এবার ইলিশের মৌসুমের শুরুটা কিন্তু ভালো ছিল। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। জেলেরা দল বেঁধে সাগরে ছুটতে থাকেন। মাছও ভালো মেলে। ইলিশ–সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ভালো মৌসুমের আশা করেছিলেন, প্রজনন–সফলতার অপেক্ষাকৃত বেশি হার দেখার পর। ইলিশের ডিম ছাড়ার হার হলো প্রজনন-সফলতা।