কর্মী নিতে সিন্ডিকেট চান না মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ আসছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ আসছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার শুরু থেকেই নির্দিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে সিন্ডিকেট না করার দাবি জানিয়ে আসছে দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। সবার জন্য বাজার উন্মুক্ত রাখার দাবি তাদের। তবে এর মধ্যেই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে বাজার খুলতে যাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। এবার এর বিরোধিতা করেছেন মালয়েশিয়ার বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখতে গত সোমবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিজ মালয়েশিয়া (পিএপিএসএমএ)। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে দেশটির সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়া উচিত। নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়ার গুজব ছড়িয়েছে মালয়েশিয়ায়। কোনো ধরনের সিন্ডিকেট বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে মালয়েশিয়ার শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এর আগে বাংলাদেশি ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। এটি উল্লেখ করে পিএপিএসএমএ বিবৃতিতে বলেছে, ওই সময় নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সির বাড়তি মুনাফার কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়া আসতে ২০ হাজার রিঙ্গিত (৪ লাখ টাকা) খরচ করেছেন। এতে এখানে আসার পর তাঁদের খরচ করার সামর্থ্য ছিল না, যা মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের পরিশোধ করতে হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তৃতীয় ধাপের নজরদারির মধ্যে আসে মালয়েশিয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিদেশি শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রম, অনৈতিক নিয়োগসহ বিভিন্ন অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করতে অস্বীকার করে বহুজাতিক অনেক কোম্পানি। তাই নতুন করে আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি না করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তাঁরা।

https://10ms.io/1eelWc
বিজ্ঞাপন

নতুন করে শ্রমবাজার চালু করতে গত ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। এরপর কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া ঠিক করতে ছয় মাস পার হয়ে যায়। সীমিত এজেন্সি নাকি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই দেরি হয় দুই দেশের। এরপর ২ জুন দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সভায় এটি চূড়ান্ত হয়। এজেন্সির তালিকা নির্ধারণের দায়িত্ব মালয়েশিয়া সরকারের হাতে ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। এর পর থেকেই ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে ২৫টি এজেন্সির তালিকা পাঠাতে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকে চিঠি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান। নির্দিষ্ট এজেন্সির তালিকা না দিয়ে বৈধ ১ হাজার ৫২০টি এজেন্সির তালিকা পাঠায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এখন এই তালিকার সবাইকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা।

https://10ms.io/1eelWc
বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়া সরকারের মন্ত্রিসভায় শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন করার কথা রয়েছে। এটি উল্লেখ করে পিএপিএসএমএ সভাপতি মেগাত ফাইরুজ জুনাইদি দেশটির সরকারের কাছে তুলে ধরা বিবৃতিতে বলেছেন, কর্মীর অভাবে শিল্প খাত ভুগছে। মালয়েশিয়ার বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন, সেবা, নির্মাণ-অবকাঠামো, কৃষি খাতে দুই লাখের বেশি বিদেশি কর্মী প্রয়োজন। এসব কাজে স্থানীয় নাগরিকেরা আগ্রহী নন। দ্রুত কর্মী নিয়োগ না করতে পারলে এসব খাত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। নির্দিষ্ট এজেন্সি দিয়ে এটি সম্ভব নয়। এ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে নির্দিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হয় না। বাংলাদেশের জন্য আলাদা নিয়ম করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ বিবৃতি ধরে সোমবার একটি প্রতিবেদন করেছে মালয়েশিয়ায় সংবাদপত্র মালয়েশিয়াকিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *