একসঙ্গে ৩ কন্যার বাবা, দারুণ খুশি মিয়া

সবুজ মিয়া ও সুমি আক্তার দম্পতির ৭ বছর বয়সী এক ছেলে আছে। এবার তারা একটি কন্যা সন্তান চেয়েছিলেন। তবে সুমি আক্তার একসঙ্গে ৩টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংসারে অভাবের সঙ্গে নিত্য বসবাস করা সবুজ মিয়া ৩ কন্যা পেয়ে মহাখুশি। টেলিফোনে বললেন, ‘আল্লাহ আমারে ৩ মেয়ে দিছে। আমি খুব খুশি। মেয়েদের মাও ভালো আছে। মেয়েরাও ভালো আছে।’

বুধবার( ২১ এপ্রিল) দমকা ঝড়ের রাতে ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুমি আক্তার ৩ মেয়ের জন্ম দিয়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে বাড়ি সবুজ মিয়ার। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি একসঙ্গে ৩টি সন্তানের বাবা হবেন। তবে সন্তানেরা ছেলে না মেয়ে তা জানতেন না। তাই আগে থেকে নাম ঠিক করা হয়নি।

সবুজ মিয়া হেসে বললেন, ‘আগে বাড়ি ফিরি, পরে মেয়েদের নাম রাখব। মেয়েরা ও মেয়েদের মা এখনো সুস্থ আছে, তাতেই আমরা খুশি।’ সবুজ মিয়া জানালেন, জটিলতা থাকায় স্ত্রীকে ১৯ এপ্রিল হাসপাতালটিতে ভর্তি করেছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসকদের ফোন পেয়ে রক্তদাতাসহ তিনি হাসপাতালে উপস্থিত হন।

কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক মোহসীনা মাহবুব জানালেন, হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমীন অস্ত্রোপচার করেন। 

ফারহানা বললেন, একসঙ্গে ৩টি বাচ্চা হওয়ায় মা ও বাচ্চাদের ঝুঁকি এখনো আছে। বাচ্চাদের ওজনও কম। তারপরও এখন পর্যন্ত তুলনামূলক ভালো আছে। বাচ্চাদের দেখভাল করছেন শিশু বিভাগের চিকিৎসকেরা।

করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে সবুজ মিয়া দরজির কাজ করতেন। একটি দোকানও ছিল, সেখানে বসেই দরজির কাজ করতেন। তবে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষার্থীদের স্কুলের পোশাক লাগছে না, অন্যরাও পোশাক বানানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে দরজির দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। পরে ধারদেনা করে ৮ সিটের অটোরিকশা কেনেন। তবে করোনায় মানুষের চলাচল কমে গেছে, আর লকডাউনে এ রিকশা নিয়ে তেমন একটা বের হতে পারেন না। পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়। তাই আয়রোজগার অনেকটাই কমে গেছে। স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানো, ভালো খাবার খাওয়ানোসহ সংসারের প্রয়োজনে ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে নিজেদের গরুটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ টাকা থেকে আগেই বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। স্ত্রীর পেছনে এখন পর্যন্ত নানা খাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। হাসপাতালে কত দিন থাকতে হবে, তা এখনো অজানা। এখানকার খরচ কত হবে, তা–ও জানেন না সবুজ মিয়া। ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ আছে। তবে এসব নিয়ে সবুজ মিয়ার আক্ষেপ কম। বললেন, ‘নিজে খাই বা না খাই, বউরে খাওয়াইছি মেয়েরা পেটে থাকার সময়। তাই তো আমার মেয়েরা সুস্থ হইছে। মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন

হাসতে হাসতে সবুজ মিয়া বললেন, শ্রীপুরে তার এলাকায় এর আগে আর কেউ একসঙ্গে তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন, তা তার জানা নেই। একসঙ্গে দুই সন্তান জন্ম হয়েছে। তাই তিন মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলে মেয়েদের দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় লেগে যাবে।

অস্ত্রোপচারের সময় অস্ত্রোপচার কক্ষে উপস্থিত থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক আশিষ কুমার মোদক তার ফেসবুকে মেয়েদের জন্মের পর একসঙ্গে ৩ কন্যার ছবি দিয়েছেন। 

তারপর তিন মেয়ে কেমন আছে, মেয়েদের পরিবার কতটা খুশি, এসব তথ্যও জানিয়েছেন এ চিকিৎসক। টেলিফোনে বললেন, ‘সে রাতে নাইট ডিউটি থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির সাক্ষী হতে পেরেছি। কোনো কোনো চিকিৎসককে হয়তো সারা জীবন এ ধরনের ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর গাইনি বিভাগে কাজ শুরু করার দুই মাসের মাথায় আমি তার সাক্ষী হলাম। সব থেকে বড় কথা, এ ধরনের অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। মা ও সন্তানদের বাঁচানো যায় না। তবে এই মা ও মেয়েরা এখনো ভালো আছে। অস্ত্রোপচারে রক্ত লাগতে পারে বলে চার ব্যাগ রক্ত রেডি রাখা হয়েছিল, এই মাকে রক্তও দিতে হয়নি। বলতে গেলে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। ৩ মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ায় দেখলাম পরিবারের সদস্যরা খুবই খুশি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *