আর কত কালের অপেক্ষায় ক্ষতিপূরণ পাবেন ৮৭ বছরের নূর চেহের

নূর চেহের বেগমের ৪০ বছরই কেটেছে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দুয়ারে দুয়ারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আজ বেলা ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে

নূর চেহের বেগমের ৪০ বছরই কেটেছে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দুয়ারে দুয়ারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আজ বেলা ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে

৪০ বছর আগের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরছেন ভিটেবাড়ি হারানো ৮৭ বছরের নূর চেহের বেগম। আর কত কাল ঘুরলে পাবেন এই ক্ষতিপূরণ, তা জানেন না তিনি। সেই হতাশা আর ক্ষোভের কথা জানাতে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে অংশ নেন নূর। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

https://10ms.io/cwDayy
বিজ্ঞাপন

নূর চেহের বলেন, ‘টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে চালাতে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি কদিন বাঁচব জানি না। আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য।’ এত বছরে তাঁর এ অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতবাক দুদক কমিশনারও।

নূর চেহেরের ছেলে মিজানুর রহমান শুনানিতে বলেন, ১৯৮০ সালে নূর চেহের বেগমের শেষ সম্বল ৩৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিজের বৈধ জমি হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের ভুলে ক্ষতিপূরণের টাকা পান অন্যরা। এর পর থেকে নিজের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে দিনের পর দিন তাঁরা মা–ছেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে ঘুরছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

স্বামীর মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া শেষ জমিটুকু বন্দর কর্তৃপক্ষের কবজায়। আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে ছেলে মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন নূর চেহের বেগম। নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে
স্বামীর মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া শেষ জমিটুকু বন্দর কর্তৃপক্ষের কবজায়। আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে ছেলে মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন নূর চেহের বেগম। নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে

শুনানিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা দিয়ে থাকে। আমরা তাদের সব বুঝিয়ে দিয়েছি। তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে অন্যরা আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও রয়েছে; যা আদালতে বিচারাধীন।’

https://10ms.io/cwDayy
বিজ্ঞাপন


জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমাদের কিছু করার ছিল না। আইনগতভাবেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে নূর চেহের বেগমের এক সন্তানকে বন্দরে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

শুনানিতে উপস্থিত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নূর চেহের তাঁর কাছে একাধিকবার এসেছিলেন। অর্থ আত্মসাৎকারী যে ছয়জন রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে ৫ লাখ টাকা তাঁকে দিতে পারি।’
শুনানিতে উপস্থিত প্রধান অতিথি দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘একজনের ক্ষতিপূরণের টাকা অন্য ব্যক্তিরা কীভাবে তুলে নিলেন, জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

শুনানি শেষে ফিরে যাওয়ার সময় নূর চেহের বেগম বলেন, ৮২ সালে তাঁর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ২৭ লাখ টাকা। এখন জায়গার দাম বেড়েছে। সেই হিসাবে এখন কয়েক কোটি টাকা হবে ক্ষতিপূরণ। জেলা প্রশাসন টাকা তুলে নেওয়া ছয়জনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, তা যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়; তিনি যাতে টাকা পান। আসামিরা শাস্তির আওতায় এসেছেন—মৃত্যুর আগে তিনি তা দেখে যেতে চান।

গণশুনানিতে পাসপোর্ট নিয়ে অভিযোগ করেন রিপন বড়ুয়া। সকালে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে
গণশুনানিতে পাসপোর্ট নিয়ে অভিযোগ করেন রিপন বড়ুয়া। সকালে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটরিয়ামে

সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া গণশুনানি শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। এতে চট্টগ্রাম বন্দর, ওয়াসা, কাস্টমস, রেল, বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট, ভূমি অফিস, ভূমি অধিগ্রহণ শাখাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৪৭টি অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *