করোনায় মৃত প্রথম চিকিৎসক

ঈদ আসে, আনন্দ আসে না মঈনের পরিবারে

মঈন উদ্দিন
মঈন উদ্দিন

‘কেমন কাটছে?’ দুই শব্দের এমন প্রশ্নে চিকিৎসক চৌধুরী রিফাত জাহানের চোখমুখ বিষণ্ন হয়ে ওঠে। চিরবিচ্ছেদের যন্ত্রণা আড়ালের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। ছলছল চোখে তিনি বলেন, ‘কঠিন সময়। খুব কঠিন সময় কাটছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য বিষয়টি আরও কঠিন।’

https://10ms.io/NwJYOf
বিজ্ঞাপন

স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে চৌধুরী রিফাত জাহান এসব কথা বলেন। তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রয়াত মঈন উদ্দিনের স্ত্রী। ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল মঈন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের মারা যাওয়ার ঘটনা ছিল এটাই প্রথম। ১৫ এপ্রিল ছিল মঈনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

ঈদের দিন বা আগের দিন গ্রামের বাড়ি সপরিবার চলে যেতেন মঈন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেন। ছোটদের সালামি দিতেন, গ্রামের অসহায় পরিবারের সদস্যদের ঈদ উপহার দিতেন। মঈনের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিনের এ ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে।

https://10ms.io/rwDoSb
বিজ্ঞাপন

ব্যস্ত চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও মঈন স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের জন্য ঈদের পোশাক কেনাকাটা করতেন। সন্তানদের নিয়ে ঈদের জামাতে যেতেন। এখন ঈদ আসে, কিন্তু তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের মনে আর আনন্দ আসে না। এখন ঈদ এলেই সন্তানেরা বাবার কবর জিয়ারত করার জন্য মুখিয়ে থাকে।

চৌধুরী রিফাত জাহান বলেন, ‘ঈদের সময়টাতে মোটামুটি একটু অবসর বেশি পাওয়ায় বাবাকে ঘিরেই দুই ছেলে আনন্দে মশগুল থাকত। গত ঈদগুলোতে তারা বাবাকে প্রচণ্ড মিস করেছে। এবারও করবে, ভবিষ্যতেও করবে। ঈদের আনন্দ আমাদের কাছে এখন ফিকে। ঈদের পর তার কবর জিয়ারতে গ্রামের বাড়িতে যাব, সে অপেক্ষায় আছি।’

https://10ms.io/cwDayy
বিজ্ঞাপন

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঈন সিলেট নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শূন্য পড়ে আছে তাঁর পড়ার কক্ষ। শেলফের তাকে তাঁরই সংগ্রহে থাকা চিকিৎসাশাস্ত্রের বই-পুস্তক থরে থরে সাজানো। বারান্দায় বাতাসে দুলছে টবে থাকা গাছগুলো। বারান্দায় অলস পড়ে আছে দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার।

মঈনের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল বাসার বারান্দা। স্থানটি দেখিয়ে চৌধুরী রিফাত জাহান জানান, তিনি (মঈন) ছিলেন খুবই ব্যস্ত
চিকিৎসক। প্রতিদিন রাত দুইটা বা আড়াইটায় বাসায় আসতেন। তবে প্রতি বৃহস্পতিবার দুই ছেলের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতেন। ছেলেরাও বাবাকে ওই দিন কাছে পেয়ে আনন্দে মশগুল থাকত। সপ্তাহের ওই দিনে তাঁরা একসঙ্গে খেতেন।

https://10ms.io/VwDoFj
বিজ্ঞাপন

মঈন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে ১৯৭৩ সালের ২ মে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বার ছিল সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে।

চিকিৎসক হওয়ার পর মঈন মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন গ্রামে যেতেন। সেখানে ওই দিন কয়েক শ অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতেন। এমনকি ওষুধ কেনার জন্য টাকাও দিতেন। দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি নানা ধরনের সহযোগিতা করতেন। ফলে এলাকায় তিনি ‘মানবিক চিকিৎসক’ এবং ‘গরিবের ডাক্তার’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। নিজের চেম্বারেও গরিব রোগীদের বিনা মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা করতেন মঈন।

পরিবার জানায়, মঈন সব সময়ই মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবতেন, তাই তাঁর সংগ্রহে থাকা চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে।

https://10ms.io/SwFLdV
বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *