২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে জমি, মাছের ঘেরে বিনিয়োগ শুরু করেন পি কে হালদার
![ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেপ্তারের পর পি কে হালদার। গতকাল উত্তর চব্বিশ পরগনার সল্টলেকে](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-05%2Ff8af2f24-3a1a-48f5-9cae-65c1d84abdcb%2FUntitled_19.png?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তাঁর সহযোগীদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কলকাতার নগর আদালত গতকাল শনিবার রাতেই তাঁদের পাঁচজন পুরুষকে ইডির হেফাজতে দেন। আর একজন নারীকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। ইডির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতি বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে পি কে হালদার দুবাইয়ে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে আসেন এবং তাঁর প্রধান সহযোগী সুকুমার মৃধার সঙ্গে মাছের ঘেরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন।
কলকাতাসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে (যার মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা রয়েছে) মাছের ঘের খুব লাভজনক ব্যবসা। পি কে হালদার যত ঘেরে বিনিয়োগ করেছিলেন, তার সব কটির সন্ধান এখনো পায়নি ইডি। সব সম্পত্তির হিসাব পেতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পি কে হালদার ২০১৯ সালের আগেই সহযোগীদের কাউকে কাউকে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। অথবা তাঁদের কেউ কেউ নিজেরাই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে জমিজমা কেনা এবং ঘেরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। তাঁদের প্রধান সুকুমার মৃধা। তিনি একদিকে আইনি পরামর্শ দিতে শুরু করেন, অন্যদিকে জমি–বাড়ির দালালি ও মাছের ঘেরের ব্যবসায় হাত পাকান।
সুকুমার মৃধা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ব্যবসায়ী, জমির দালাল ও মাছ ব্যবসায়ীদের একটি বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তদন্তকারীদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয় যে সুকুমার মৃধা নিজেই এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, নাকি অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে পি কে হালদারই তাঁকে দিয়ে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করিয়ে ছিলেন। যাতে পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মাছের ঘের ও আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধা পরিবারের সদস্যদের যে একটা যোগাযোগ ছিল, সেটাও এখন মোটামুটি স্পষ্ট। এর কারণ রাজনৈতিক যোগাযোগ ছাড়া এত কম সময়ে এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা সম্ভব নয়। কাদের সঙ্গে কেমন যোগাযোগ তাঁদের ছিল, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশে আগেই গ্রেপ্তার হওয়া সুকুমার মৃধার কাছ থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে, তা জানতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। পি কে হালদারকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বিভিন্ন সম্পত্তিতে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে যেতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের পাশাপাশি দুবাইয়ে অবস্থানরত সহযোগীদের সঙ্গেও বরাবরই যোগাযোগ রেখেছিলেন পি কে হালদার। তৃতীয় একটি দেশের সিম কার্ড ব্যবহার করে সেখানে যোগাযোগ রাখা থেকে অর্থ পাচার সবই করছিলেন তিনি। ইডির কর্মকর্তাদের ধারণা, পি কে হালদারের আত্মসাৎ করা অর্থের একটা বড় অংশ এখনো দুবাইয়ে রয়েছে। হুন্ডির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দুবাই ও পশ্চিমবঙ্গ দুই জায়গাতেই অর্থ পাঠানো হয়েছে।
পি কে হালদারের বিষয় নিয়ে আগে থেকেই অনানুষ্ঠানিক স্তরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কথাবার্তা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে অপরাধমূলক তথ্যের আদান-প্রদানবিষয়ক যে প্রটোকল রয়েছে, তার আওতায় এটা করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ইডি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি। কারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং তাঁদের সঙ্গে পি কে হালদারের কী সম্পর্ক, সে বিষয়ও স্পষ্ট করেনি। শুধু গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, পি কে হালদার পরিবারের বিভিন্ন সম্পত্তিতে তল্লাশি চালানো শুরু হয়েছে।