হাইব্রিড গাড়িতে বেশি মাইলেজ পেতে…
হাইব্রিড গাড়িছবি: লেখক
কম জ্বালানি খরচ এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্রেতাদের মন জয় করেছে হাইব্রিড গাড়ি। বছরজুড়ে জ্বালানি খরচ কমাতে হাইব্রিড গাড়ি কিনেছেন প্রযুক্তিপণ্য ব্যবসায়ী মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া। তবে তিনি সাধারণ গাড়ির মতোই মাইলেজ পাচ্ছেন তাঁর হোন্ডা ভেজেল হাইব্রিড মডেলের গাড়ি থেকে। এটা চালানোর জন্য দক্ষ চালকও আছে। যানজটের এই শহরে গাড়ির চালক কিছুক্ষণের জন্য থামলেও গিয়ার মোডকে ‘এন’ (নিউট্রাল)–এ নিয়ে আসেন। সাধারণ গাড়িতে এটি করা হলেও হাইব্রিড গাড়িতে ব্যবহার করতে হয় ‘অটো হোল্ড’। বাটনটি চাপ দিলে গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাইব্রিড ব্যাটারিকে চার্জ করতে থাকে। পরে যা গাড়িকে চলতে সাহায্য করে। হাইব্রিড গাড়িতে ভালো মাইলেজ পেতে অর্থাৎ জ্বালানি খরচ কমাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
চাকার হাওয়া ঠিক রাখতে হবে
স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চালানোর জন্য চাকায় কী পরিমাণ হাওয়া আছে, সে বিষয়ে জানা জরুরি। হাওয়া কম থাকলে গাড়ির ইঞ্জিনে চাপ পড়ে। আবার বেশি হাওয়া ভরা থাকলেও গাড়ি ভালোভাবে চলতে পারে না। তাই গাড়ির উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী চাকায় হাওয়া ভরতে হবে। নতুন মডেলের গাড়িগুলোতে টিপিএমএস (টায়ার প্রেশার মনিটরিং সিস্টেম) আছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে গাড়ির চাকায় হাওয়ার পরিমাণ এবং তাপমাত্রার তথ্য জানা যায়। পুরোনো গাড়িগুলোতেও এই যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাকার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। গাড়িতে হাওয়া ঢোকানো বা বের করার জন্য বাজারে অনেক ধরনের বহনযোগ্য যন্ত্র পাওয়া যায়।
এসি চালানো যাবে সবসময়
অনেকের ধারণা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) চালানো হলে গাড়িতে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। হাইব্রিডের ক্ষেত্রে এই ধারণা অনেকটাই ভুল। হাইব্রিড গাড়িতে এসি চালাতে বাড়তি জ্বালানি খরচ হয় না। হাইব্রিড গাড়ির জেনারেটরের মাধ্যমে এসির কম্প্রেশার কাজ করে। তাই এসি চালালে গাড়ির পেছনে থাকা ব্যাটারিকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহৃত ভেন্টগুলোতে সঠিক মাত্রায় বাতাস ঢুকতে পারে। এতে হাইব্রিড ব্যাটারি ঠান্ডা ও কার্যক্ষম থাকে। পাশাপাশি গাড়ির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য (ইন্টেরিয়র) ধুলাবালি মুক্ত থাকে। এতে দুই দিকেই গাড়ি উপকৃত হয়।
সিট কভার লাগাতে সতর্কতা
অনেকেই কিছুদিন পরপর গাড়ির সিটের কভার পরিবর্তন করেন। হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে পেছনের আসনে সিট কভার লাগানোর সময় হাইব্রিড ব্যাটারির কুলিং সিস্টেম যেন ঢেকে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল এবং উন্নতমানের জ্বালানি ব্যবহার
গাড়ির ইঞ্জিন ভালো রাখতে ইঞ্জিন অয়েলের গুরুত্ব রয়েছে। তাই সঠিক গ্রেডের আসল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে গাড়ির মাইলেজ বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য অনুমোদিত ফিলিং বা ফুয়েল স্টেশন থেকে জ্বালানি নিতে হবে। এতে গাড়ির ইঞ্জিনের কার্যকারিতা ভালো থাকবে। গাড়িতে ট্রিপ এ, বি এবং সি ব্যবহার করে প্রতি লিটারে জ্বালানি খরচের হিসাব জেনে রাখা উচিত।
গাড়িতে অপ্রয়োজনীয় পণ্য বহন না করা
হাইব্রিড গাড়িতে অতিরিক্ত ব্যাটারি এবং কন্ট্রোলার থাকায় এমনিতেই সাধারণ গাড়ির তুলনায় ওজন একটু বেশি হয়। এ জন্য অপ্রয়োজনীয় পণ্য গাড়িতে না রাখাই ভালো। অনেকেই দেখা যায় ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে কৌটাটাও গাড়িতে রেখে দেন। আবার আসনসংখ্যার বেশি যাত্রী পরিবহনে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়াসহ সাসপেনশন, চাকা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে চাপ পড়ে। এতে গাড়ির ক্ষতি হয়।
রিকন্ডিশনড গাড়ি কিনতে মাইলেজ পরীক্ষা
হাইব্রিড গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ির হাইব্রিড ব্যাটারিতে ২ বছর বা ২ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে। দেশে যেহেতু এখনো রিকন্ডিশনড গাড়ির চাহিদা বেশি, সেহেতু কেনার সময় অকশন শিট দেখে গাড়িটি আগে কত কিলোমিটার পর্যন্ত চলেছে, তা জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত কম মাইলেজে গাড়িটি কেনা যাবে, তত গাড়ির ব্যাটারির অবস্থা ভালো পাওয়া যাবে।
চালানোর কৌশলে আনতে হবে পরিবর্তন
অ্যাকসেলারেটর যত জোড়ে চাপ দেওয়া হয়, তত জোরে ছুটে গাড়ি। তবে হাইব্রিড গাড়িতে হঠাৎ অ্যাকসেলারেটরে চাপ না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে গতি বাড়ানো ভালো। এতে গাড়ি ইভি (ইলেকট্রনিক ভেহিক্যাল) মোডে বেশি পরিচালিত হবে। ফলে জ্বালানি খরচ কম হয়। সাধারণ সময়ে ভালো মাইলেজ পেতে ইকো (ইকোনমিক) মোডে গাড়ি চালাতে হবে। এতে তাৎক্ষণিক গতি কম পেলেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বেশি মাইলেজ পাওয়া সম্ভব। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, গিয়ার মোডে এন মোড ব্যবহার না করে অটো হোল্ড মোড ব্যবহার করতে হবে। যেসব গাড়িতে অটো হোল্ড বাটন নেই, সেসব গাড়িতে যানজটে ‘পি’ (পার্কিং) মোড ব্যবহার করতে হবে।