শরণার্থীর সংখ্যায় রেকর্ড: ভূমধ্যসাগরে কতজনের সলিলসমাধি, কে খোঁজ রাখে তার

যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের অর্ধেকের বেশি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে
যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের অর্ধেকের বেশি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে

যুদ্ধ–সংঘাত, সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন–নিপীড়নের কারণে বিশ্বব্যাপী ঘরহারা–ভিটেহারা মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছি, প্রথমবারের মতো। এই হিসাব জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক দুই সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও ইউএন রিফিউজি এজেন্সির। এতে চার মাসে গড়ানো ইউক্রেন যুদ্ধের ভূমিকাও বেশ বড়। রুশ বাহিনীর লাগাতার হামলায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুভিটা ছাড়া হয়েছে ৮০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়।

জাতিসংঘের হিসাবে, এর মধ্যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৬০ লাখের বেশি মানুষ।
ভিটেমাটি থেকে কাউকে উৎখাত করা নয়, বরং সবার মাথার ওপর আচ্ছাদন দেওয়ার কথাই তো সভ্যতার বড়াই করা এই বিশ্বের। কিন্তু বাস্তবতা যেন উলট পুরাণের সমার্থক।

ভাসমান–ছিন্নমূল মানুষ মাথা গোজার ঠাঁই তো পায়ই না, উল্টো যাদের ঘরবাড়ি আছে, তাদের কাছ থেকে তা কেড়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত বহাল—এ পরিস্থিতিকে ‘সভ্যতার সংকট’ বলে উচ্চারণ না করলেও বিষয়টি বোঝার কিছুমাত্র বাকি থাকে না। এই নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে মিনিটে শরণার্থী হতেন গড়ে ছয়জন মানুষ। দেড় দশক পর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪-এ, অর্থাৎ ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে নামতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ে চার গুণ। বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন শরণার্থী।

ইউএনএইচসিআরের ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট: ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট রিপোর্ট ইন ২০১৫’ অনুযায়ী তখন বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৫৩ লাখ। এই কয় বছরে তা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এখন ১০ কোটির বেশি মানুষ গৃহহারা। পরিসংখ্যানের এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ বলে দিচ্ছে, সংকট দিনকে দিন আরও প্রকট হচ্ছে। দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের গভীর ক্ষত সারিয়ে নতুন উদ্যমে ‘ক্ষতহীন’ আগামীর দিকে পা বাড়ানো বিশ্বের এটাই সর্ববৃহৎ মানবিক সংকট, নিঃসন্দেহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *