যুদ্ধে বাধ্যতামূলক যোগদানের আদেশের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় বিক্ষোভ চলছেই, শত শত আটক

রাশিয়ায় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা
রাশিয়ায় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা

রাশিয়ায় ‘আংশিক সেনানিযুক্তির’ (পার্শিয়াল মোবিলাইজেশন) ঘোষণার বিরুদ্ধে দেশটিতে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভ থেকে শত শত মানুষকে আটক করা হচ্ছে। রাশিয়ায় মানবাধিকারবিষয়ক স্বাধীন ধারার সংগঠন ওভিডি ইনফো বলছে, গতকাল শনিবার ৩২টি ভিন্ন ভিন্ন শহর থেকে ৭২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘আংশিক সেনানিযুক্তি’ করার ঘোষণা দেন। সামরিক বাহিনীর আপৎকালের জন্য মজুত সেনাদের কিছু অংশকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এটাকেই ‘আংশিক সেনানিযুক্তি’ বলা হচ্ছে।

এর আওতায় নতুন করে তিন লাখের বেশি সেনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। যাঁদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের উপযোগী বিবেচনা করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, দেশটিতে অননুমোদিত বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ। তবে পুতিনের আংশিক সেনানিযুক্তির ঘোষণার পর শহর এলাকাগুলোয় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ থেকে এক হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোতে আটক হওয়ার সময় এক বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমরা যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহারের পাত্র নই।’

রাশিয়ার দ্বিতীয় শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পুতিনের হয়ে লড়তে যুদ্ধে যেতে চাই না।’

নাতালিয়া দুবোভা নামে ৭০ বছর বয়সী এক নারী এএফপিকে বলেন, তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। যে তরুণদের সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন নাতালিয়া।

গতকাল যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, তাঁদের যুদ্ধে যোগদানের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে আটক থাকাবস্থাতেই তাঁদের নিয়োগ কেন্দ্রগুলোয় হাজির হতে বলা হয়।

এ ধরনের আচরণের পক্ষে ইতিমধ্যে যুক্তিও দেখিয়েছে ক্রেমলিন। তারা বলছে, এ ধরনের তৎপরতা আইনবিরোধী নয়। চিঠিতে দেওয়া আদেশ অমান্য করলে তাদের জন্য কঠোর সাজার বিধান রেখেছে মস্কো।

গতকাল পুতিন নতুন একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো সেনা যদি প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার চেষ্টা করেন কিংবা যুদ্ধ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তবে তাঁদের ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

বিদেশি নাগরিকদের যাঁরা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হয়ে এক বছর কাজ করবেন, তাঁদের দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রেখে তৈরি একটি আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

এদিকে জোরপূর্বক যুদ্ধে পাঠানোর পদক্ষেপ থেকে বাঁচতে তরুণ রুশ নাগরিকদের অনেকে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন।

জর্জিয়া সীমান্তে অপেক্ষারত রুশ গাড়ির সারি ৩০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। রুশ মন্ত্রণালয় জনগণকে দেশ ছেড়ে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় রুশ কর্মকর্তারাও বলেছেন, অনেক গাড়ি সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। শুধু একটি ফাঁড়িতে আড়াই হাজার গাড়ি অপেক্ষা করার কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা। যদিও বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, রুশ নাগরিকদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাটি ‘ভুয়া’।

ফিনল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীদের মুখপাত্র মাত্তি পিতকানিত্তি বলেন, গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে ফিনল্যান্ডে আসা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *