বাসমালিক গ্রুপের বাধার মুখে মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে ফিরে গেল বিআরটিসির বাস

জেলা বাসমালিক গ্রুপের লোকজন বাসের বেলুনসহ সাজসজ্জা উপকরণ ছিড়ে ফেলেন। আজ সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়
জেলা বাসমালিক গ্রুপের লোকজন বাসের বেলুনসহ সাজসজ্জা উপকরণ ছিড়ে ফেলেন। আজ সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় 

উদ্বোধনের পর প্রথম ট্রিপেই আটকে গেল ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির বাস। আজ বুধবার সকালে ফরিদপুর জেলা বাসমালিক গ্রুপের বাধার মুখে পড়ে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে বাসটি ভাঙ্গা থেকে ফিরে গেছে। সকাল আটটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভার পৌর কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বোয়ালমারী–ঢাকা রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান। আজ সকালেই ওই বাসের প্রথম ট্রিপ ছিল। ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বাসে যাত্রীপ্রতি সাড়ে ৫০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সকাল সাতটায় বোয়ালমারী থেকে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। সকাল আটটার দিকে ভাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে বাসটি ফরিদপুর বাসমালিক গ্রুপের বাধার মুখে পড়ে। পরে মাঝপথে বাসটি যাত্রীদের নামিয়ে আবারও বোয়ালমারীর পথে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বোয়ালমারী থেকে আসা বিআরটিসি বাসের যাত্রী ইমরান ফরহাদ (৩২) বলেন, ভাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসার পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বাসের চালকের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেন। তাঁরা বাসের চালক ও সহকারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাসের যাত্রীদের সঙ্গেও তাঁরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

ওই বাসের বাসের আরেক যাত্রী আশিকুর রহমান (৩০) বলেন, বোয়ালমারী থেকে ভাঙ্গা আসার পর যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এই বাসের যাত্রীদের অপমান করা হয়। বাসের ৪২ আসনেই যাত্রী ছিল।

ওই বাসের চালকের সহকারী তারিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুর বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় এক থেকে দেড় শ লোক মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁদের বাসটি থামিয়ে দেন। এরপর তাঁরা চড়াও হয়ে বাসের চালককে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় চালকের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ অবস্থায় বাধা দিতে গেলে তাঁকেও হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি দাবি করেন।

বিআরটিসির বাসটির চালক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘মালিক সমিতির (বাসমালিক গ্রুপ) লোকজন টেনেহেঁচড়ে আমাদের নামিয়ে মারধর করে। এ লাইনে বাস চালালে হাত–পা কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়।’

এদিকে বাস থামিয়ে দেওয়া খবর বোয়ালমারীতে ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে রাজধানী ডিলাক্স নামে একটি বাস আটকে দেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বাসমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই বোয়ালমারী থেকে বিআরটিসির বাসটি চলাচল শুরু করেছে। এ কারণে ভাঙ্গা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে ওই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনও জানে। বিআরটিএর পক্ষ থেকে দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোনো উপজেলাভিত্তিক বাস চলাচলের অনুমতি নেই। আর ফরিদপুরে বিআরটিসির কোনো ডিপো নেই। কুমিল্লা ডিপোর বাস এনে ওই ডিপোর ম্যানেজারের নামে লিজ নিয়ে বাস চালানো হচ্ছিল বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে বিআরটিসির ব্যবস্থাপক (অপারেশন–কুমিল্লা ডিপো) মো. কামরুজ্জামান বলেন, জেলা বাসমালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে বিআরটিসির বাস বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার নেই। পরিবহনসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌচ্ছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই হিসেবে ওই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করা ঠিক হয়নি।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘বাস চলাচলের বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া বিআরটিসির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *