‘বাবা ফিরে এলে তাঁর হাত ধরে স্কুলে যাব’

বাবা মো. সোহেল যখন নিখোঁজ হন, তখন সাদিকা সরকার সাফার বয়স ছিল মাত্র তিন মাস। সেই সাফার বয়স এখন ৯ বছর। সে ঢাকার একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘ ৯ বছরে সাফার বাবা সোহেলের খোঁজ মেলেনি। আজ মঙ্গলবার সকালে মা নিলুফা ইয়াসমিনের হাত ধরে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আসে সাফা। ফুটপাতে একটি চেয়ারে বাবার ছবি হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই সাফা বলে, ‘আমার বন্ধুদের সবার বাবা আছে। বাবার সঙ্গে তারা স্কুলে আসে। আমি কখনোই বাবাকে দেখিনি। বাবা ফিরে এলে তাঁর হাত ধরে স্কুলে যাব।’
সাফাদের মতো আরও ৬৫টি পরিবারের সদস্যরা আজ সকালে শাহবাগে উপস্থিত হয়েছিলেন, যাঁরা প্রিয়জনের খোঁজ পেতে বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁরা সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে আয়োজিত এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তাঁরা তাঁদের গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধনের আয়োজক গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
সাফার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, পাশেই ছিলেন তার মা নিলুফা। তিনি বলেন, ‘ও (সাফা) শুধু বাবার ছবি দেখেছে। ও যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করল, তখন থেকেই বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে। স্কুলে বন্ধুরা যখন বাবার গল্প করে, তখন ওর খুবই মন খারাপ হয়। বাবা কোথায়, আমার কাছে জানতে চায়। তখন আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। এই প্রশ্নের উত্তর তো আর আমার জানা নেই।’
সোহেল ছিলেন বংশাল থানা ছাত্রদলের সহসভাপতি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর শাহবাগ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। তার পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি।
নিলুফার বলেন, ‘সোহেলের খোঁজে কত জায়গায় গিয়েছি, তার কোনো হিসাব নেই। আমার বিশ্বাস, সোহেল একদিন ফিরে আসবে।’
জানি না, বাবা জীবিত নাকি মৃত
২০১৯ সালের ১৯ জুন ‘গুম’ হন মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। সে সময় তাঁর মেয়ে আনিশা ইসলাম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার খোঁজ পাওয়ার দাবি নিয়ে সে আজ তার মা নাসরিন জাহানের সঙ্গে শাহবাগের মানববন্ধনে এসেছে।
মানববন্ধনে আনিশা বলে, ‘তিন বছর ধরে বাবার জন্য কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আমি হতভাগ্য সন্তান। মোনাজাতে বসে বাবার জন্য কী দোয়া করব, তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাই। আমি একবার দোয়া করি, আল্লাহ, তুমি আমার বাবাকে বেহেশত নসিব করো। আবার দোয়া করি, আল্লাহ, তুমি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও। আমি জানি না, আমার বাবা জীবিত নাকি মৃত। আমি আবার বাবার সন্ধান চাই।’