বলির পাঁঠা বানানো যাবে না ইন্টারনেটকে

ইন্টারনেটকে বলির পাঁঠা বানানো যাবে না

আমরা এমন এক বিস্ময়–জাগানিয়া জমানায় বাস করছি, যখন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি অংশে একটি প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে। সেই প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট। এটি এমন এক প্রযুক্তি, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি খাতে এখন নিয়ামক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে; যা মহাদুর্যোগ থেকে মহামারির সময় মানুষের প্রাণ সঞ্জীবনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর এমনভাবে এর ডিজাইন করা হয়েছিল, যাতে প্রতিটি মানুষের জন্য তা অবারিত থাকবে কিন্তু কেউ তার মালিক হতে পারবে না।

কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা ইন্টারনেটের উপযোগিতা সম্পর্কে আন্দাজ করতে পেরেছি। শারীরিকভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াই দূর থেকে এই সময়টাতে আমরা আমাদের হাজারো দাপ্তরিক কাজ সেরে ফেলতে পেরেছি। খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা এমন এক জমানাতেও বাস করি যেখানে ভয়, আতঙ্ক ও সন্দেহের ধোঁয়া আমাদের সর্বক্ষণ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ইতিপূর্বে সংঘটিত যেকোনো যুদ্ধ বা মহামারির চেয়েও নিকৃষ্ট জিনিস হলো ইন্টারনেট—এমন দাবির সন্ধান পেতে আপনাকে গুগলে আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে হবে না। সাধারণ অনুসন্ধানেই এ ধরনের দাবির কথা খুব সহজেই পাওয়া যাবে। সন্ত্রাসবাদ, শিশু পীড়ন এবং এমনকি গণতন্ত্রের অপব্যবহারসহ বহু সমস্যার বলির পাঁঠা হয়ে থাকে ইন্টারনেট।

আসুন একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখি। যদি আমরা ফেক নিউজ বা ভুয়া খবরকে ইন্টারনেটের ত্রুটি বলে বিশ্বাস করি, তাহলে তা বিংশ শতকের রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা যন্ত্রের ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারের কথা ভুলে যাওয়ারই নামান্তর হবে। অনেকে সামাজিক মূল্যবোধর অবনমনের জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করে থাকেন। ভাবটা এমন যেন টুইটার আসার আগে মিথ্যুক রাজনীতিকেরা মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়ানো কথা বলতেন না। সমাজ ও ব্যক্তির ওপর নিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। আমরা ক্ষিপ্রগতিতে বিবর্তিত হচ্ছে এমন একটি সমাজবাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই বিবর্তনে প্রশ্নাতীতভাবে ইন্টারনেটের উত্থান একটি বড় ভূমিকা রাখছে। কারণ, ইন্টারনেট দ্রুত নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *