ফেসবুককে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে পরামর্শ দিলেন জাকারবার্গ

 মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ

অনেকেই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ঢুকে সারা দিন স্ক্রল করে নানা পোস্ট দেখতেই থাকেন। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এ ধরনের স্ক্রল করার পক্ষে নন। তাঁর দৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তৈরি করা হয়েছে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।

মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, মার্ক জাকারবার্গ তাঁর অধিকাংশ সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। কিন্তু তাঁকে কখনোই আপনি উদ্দেশ্যহীনভাবে ইনস্টাগ্রাম রিলসে স্ক্রল করে সময় কাটাতে দেখবেন না। জাকারবার্গ মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উপযোগিতা তখনই পাওয়া যাবে, যখন একে যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেই বেশি ব্যবহার করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌতুক অভিনেতা ও উপস্থাপক জো রোগানের পডকাস্ট অনুষ্ঠান ‘জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স’-এ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকার দেন মার্ক জাকারবার্গ। তিনি বলেন, তাঁর মতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার ব্যবহারকারীর ভালো থাকার ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে, এগুলোকে যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ব্যবহার করতে হবে।

জাকারবার্গ বলেন, ‘বসে বসে শুধু কনটেন্ট দেখতে থাকলে তাকে আমি খারাপ বলব না। কিন্তু এ বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তার সঙ্গে যুক্ত থাকার যে সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো আপনি শুধু স্ক্রল করে কনটেন্ট দেখে গেলে পাবেন না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে জাকারবার্গ ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কিছু ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষয়টি কেবল যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশি স্ক্রল করা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, শুধু তাঁদের বেলায় প্রযোজ্য। যাঁরা একে গঠনমূলক কাজে লাগান, তাঁদের বেলায় এটা খাটে না।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মমাফিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, যেমন প্রতিদিন অন্যদের শেয়ার করা কনটেন্টে লাইক দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক এবং সামাজিক সুস্থতা ও সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বিপরীত বিষয়টিও ঘটে যখন কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর অতিনির্ভর হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার বিষয়টিও যুক্ত।

গবেষণার অন্যতম লেখক মেসফিন অ্যাওকে বেকালু একটি সাক্ষাত্কারে ব্যাখ্যা করেন, কেউ যখন কোনো কিছু আড়ালে চলে যাওয়ার ভয়ে (এফএমও) কোনো অ্যাপ বারবার দেখতে থাকেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লগইন না থাকায় বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে আছেন এমন অনুভব করতে থাকেন, তখন তাঁর স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এ কারণে জাকারবার্গ দাবি করেছেন, ফেসবুক নিয়ে তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে ইন্টারনেটে বেশি সময় না রাখা। তাঁর মেটাভার্স নিয়েও তিনি এ পরিকল্পনা করছেন। এর পরিবর্তে তিনি চান, মানুষ যতটুকু সময় ইন্টারনেটে থাকবে, তা যেন আরও আকর্ষণীয় এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়।

জাকারবার্গ বলেন, ‘মানুষ কম্পিউটারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাক, তা আমি চাই না। আমি শুধু চাই, মানুষ যে সময়টা স্ক্রিনে কাটায়, সেটা আরও কার্যকর হোক।’

অবশ্য এ নিয়ে জাকারবার্গকে সমালোচনাও কম সইতে হয় না। সমালোচকদের যুক্তি, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আসক্তি তৈরি করে। কিশোর ও শিশুদের জন্য এটি ক্ষতিকর। ফেসবুকের পক্ষ থেকে অবশ্য সমালোচনার জবাব দিতে বেশ কিছু ফিচার আনা হয়েছে। এতে কতটুকু সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কাটাবেন, তাঁর সময় নির্ধারণ করে রাখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *