প্রবাসফেরত দুই তরুণের ‘প্রবাসীর ট্যাক্সি’

মালয়েশিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা দুই তরুণ উদ্যোক্তা চালু করেছেন ‘প্রবাসীর ট্যাক্সি’। দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যেতে তাঁর মতো প্রবাসীদের যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সে জন্যই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন প্রবাসফেরত দক্ষ গাড়িচালক এবং প্রবাসফেরত গাড়ির মালিকেরা।

ই দুই উদ্যোক্তার একজন হলেন আল আমিন নয়ন। আরেকজন হলেন রায়হান কবির। দুজনই বললেন, একমাত্র প্রবাসীরাই প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা পরীক্ষামূলকভাবে দক্ষ গাড়িচালকদের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই দুই উদ্যোক্তাই বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচিতে তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের কাজ প্রবাসী এবং প্রবাসফেরত মানুষকে নিয়েই।আল আমিন নয়ন প্রবাসে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের কাছে ‘নয়ন ভাই’ নামে পরিচিত। রাজশাহীর ছেলে আল আমিন। ২০০৭ সালে তাঁর বাবা জমি বিক্রি করে তাঁকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। একটি কোম্পানিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতে পাসপোর্ট ও সরকারি ছাড়পত্র নিয়েই তিনি মালয়েশিয়া যান। কিন্তু যাওয়ার পরই বুঝতে পারেন, তিনিসহ অন্যদের আসলে তামিল এক মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের জঙ্গল কাটতে হতো। সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো-উপদ্রব সবই সহ্য করতে হতো। লাঠি দিয়ে পিটুনি ছাড়াও নানা কায়দায় নির্যাতন করা হতো।

অত্যাচারে একসময় আত্মহত্যা করারও হুমকি দিয়েছিলেন আল আমিন ও তাঁর সঙ্গীরা। বন্দিদশা থেকে পালানো, দূতাবাসের সামনে গিয়ে অনশন ও আন্দোলনেও নামতে হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে তানাগানিতা নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় সাত মাসের মাথায় ৮০ জন খালি হাতে শুধু প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছিলেন।

আল আমিন নয়ন জানালেন, তাঁদের প্রবাসীর ট্যাক্সি উদ্যোগে নির্যাতনের শিকার বা কোনো কারণে খালি হাতে ফেরা শ্রমিকদের কল্যাণে একটি তহবিল গঠন করা হবে। ট্যাক্সি সার্ভিসের প্রতি ট্রিপের ভাড়া থেকে ২ শতাংশ জমা রাখা হবে তহবিল গঠনের জন্য আর ৩ শতাংশ সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় করা হবে।

আল আমিন বলেন, করোনার এই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। বিমানবন্দরে নেমে যাঁদের নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা নেই, তাঁরা বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন। বিমানবন্দরের সিন্ডিকেট গাড়ি ব্যবসায়ীরা যাতায়াতে বেশি ভাড়া নেওয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন। বেশির ভাগেরই ধারণা, বিদেশ থেকে ফিরেছেন, তার মানেই অনেক টাকা নিয়ে ফিরেছেন। তাই যেভাবেই হোক প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করার পাঁয়তারা চলতে থাকে। প্রবাসীর ট্যাক্সি উদ্যোগে স্বল্প ভাড়ায় তাঁদের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরে বিদেশফেরত শ্রমিকদের নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতায় আল আমিন বলেন, ফেরত আসা ব্যক্তিদের অনেকেই জানিয়েছেন তাঁরা বিদেশে গাড়ি চালাতেন। কিন্তু দেশে ফিরে কেউ মুরগির খামার দিচ্ছেন বা বেকার বসে থাকছেন। তাঁদের দক্ষতাটাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না বা কাজে লাগানোর কোনো জায়গা নেই। তাই তাঁরা বিদেশফেরত দক্ষ চালকদের একটি ডেটাবেইস করে সংগঠিত করতে চাচ্ছেন।

উদ্যোক্তারা জানালেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে আটটি গাড়ি নিয়ে এ উদ্যোগ যাত্রা শুরু করেছে। প্রায় ৫০ জনের মতো চালক তাঁদের নাম যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। আপাতত ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও দেশব্যাপী এ সেবা চালুর ইচ্ছার কথা জানালেন উদ্যোক্তারা। একটি অ্যাপ তৈরির প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারের অন্যান্য অনুমোদনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *