পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি পুতিনের, বাইডেন কী করবেন

হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হচ্ছে, রাশিয়া যদি কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তাদের ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে

হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হচ্ছে, রাশিয়া যদি কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তাদের ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবেছবি : রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যদি কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে সেটা ‘শেষ যুদ্ধ’ ডেকে আনবে। ৬ অক্টোবর নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, ‘এই সংকট ৬০ বছরের মধ্যে বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের খুব কাছে নিয়ে এসেছে।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার বলে আসছেন, রাশিয়া যদি হুমকির মুখে পড়ে, তবে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবেন না। এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘কেনেডি ও কিউবার মধ্যকার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর আমরা আর এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। পুতিন এমন একজন মানুষ, যাঁকে আমরা মোটামুটি ভালো করেই জানি। তিনি যখন যুদ্ধের জয়-পরাজয় নিষ্পত্তির জন্য কৌশলগত পারমাণবিক অথবা জৈব অথবা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের শক্ত ধরনের হুমকি দেন, তখন সেটা নিছক হাস্যকর কোনো ব্যাপার নয়। কেননা ইউক্রেনে তাঁর সেনাবাহিনী খুব বেকায়দায় পড়েছে।’

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি এসেছে। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার রাশিয়া বড় ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে যে ন্যাটো যদি কোনো ধরনের আগ্রাসন চালায়, তাহলে নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য ‘সম্ভাব্য সব ধরনের’ অস্ত্রের ব্যবহার করবে মস্কো। সম্প্রতি ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ রাশিয়া ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার পরও মস্কোর দিক থেকে একই দৃষ্টান্ত দেখা গেল।

যুদ্ধে সরাসরি ন্যাটো যাতে সম্পৃক্ত না হয়, সেই বাধা সৃষ্টির জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি আসতে পারে। গত মার্চ মাসে বাইডেন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে তিনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চান না। তাঁর এই বক্তব্য পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে ন্যাটোকে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা কিংবা ইউক্রেনকে অগ্রসর প্রযুক্তির অস্ত্র সরবরাহ, সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের জোগান দেওয়া থামাতে পারেনি মস্কো।

সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কাছে উপর্যুপরি মার খেয়েছে। এ থেকে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হতে চলেছে। তাঁরা মনে করছেন, যুদ্ধকে এখন নিজেদের পক্ষে ফেরাতে হলে অকৌশলগত (অল্প ক্ষমতাসম্পন্ন) পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া এবং খেরসনকে রাশিয়া ফেডারেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তা সত্ত্বেও ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সেনাদের ওপর বড় ধরনের পাল্টাহামলা চালাচ্ছে। এতে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার অধিকৃত একটা বড় এলাকার পুনর্নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তাঁদের হাতে হাজার হাজার রুশ সেনা আটক হয়েছেন অথবা নিহত হয়েছেন।

খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার একটি ট্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন একটি বিভাগের (১২তম) জন্য সেই ট্রেনে সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে যে বিভাগটা পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের বিষয়টা দেখভাল করে। যদিও কী কী সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে খবরে কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া একটি গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করতে চলেছে। যদিও ক্রেমলিন এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

ক্রেমলিনের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত চেচেন নেতা রামজান কাদিরভ। যুদ্ধে রাশিয়ার বর্তমান পদক্ষেপের জোরালো সমালোচনা সম্প্রতি তিনি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং কম ক্ষয়ক্ষতি করে এমন পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে হবে।’

অ্যাটমিক সায়েস্টিটস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, রাশিয়া নিছক নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশে অকৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, এ ধরনের বিস্ফোরণ কোনো স্থাপনাকে লক্ষ্য করে করা হবে না, তাতে প্রাণহানিও হবে না। কিন্তু ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের বাধা দেওয়া যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় কী

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে পুতিন যে হুমকি দিয়েছেন, সেটা ধোঁকাবাজির মতো কোনো ব্যাপার নয়। এ হুমকির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র একটা ‘যুদ্ধ-খেলায় নেমে পড়েছে’।  সিএনএনকে তিনি বলেন, পুতিনকে কোনো ছাড় নয়। ইউক্রেনে আগ্রাসন ঘটিয়ে তিনি একবার দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁকে আরেকবার সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।

হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক অবস্থান হচ্ছে, রাশিয়া যদি কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তাদের ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করলেও প্রচলিত সব ধরনের অস্ত্রের পূর্ণ ব্যবহার করতে পিছপা হবে না।

আফগানিস্তানে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ডেভিড পেট্রিয়াস পরামর্শ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেনে অবস্থানরত রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে নির্মূল করা এবং তাদের কৃষ্ণসাগরে ডুবিয়ে দেওয়া। তাঁর মতে, রাশিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে ন্যাটো চুক্তির ৫ নম্বর ধারা বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই। এই ধারা অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে সর্বাত্মক হামলা করতে গেলে সদস্য কোনো দেশ শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হবে। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র হামলা হলে এর তেজস্ক্রিয়তায় ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আক্রান্ত হবে। এটাকে হামলা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *