নিউমার্কেটের সংঘর্ষ এত দূর গড়াল কেন
রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি খাবারের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে বচসা হয় ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর। এর জের ধরে সোমবার গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও দোকানিদের সংঘর্ষ হয়। তাতে কয়েকজন আহতও হন। পুলিশ আসে, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষ রাত আড়াইটা পর্যন্ত গড়ায়।
সাহ্রির সময় ঘনিয়ে আসায় দুই পক্ষ যখন রণে ক্ষান্ত দেয়, তখন পুলিশও চলে যায়। কিন্তু রাতের এই সংঘর্ষ সেখানেই শেষ হয়নি। এর জেরে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় জড়ো হন মানববন্ধনের জন্য। এ সময় নিউমার্কেটসহ আশপাশের কয়েকটি মার্কেটের দোকানিরা বেরিয়ে এলে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মিরপুর সড়ক। শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। যানজট ছড়িয় পুরো শহরে। নিত্য যানজটের এ শহরে যোগ হয় চরম ভোগান্তি। সংঘর্ষ শুরুর তিন ঘণ্টা পর পুলিশ এসে আবার কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সংঘর্ষ তবু থামেনি।
প্রশ্ন হলো, রাতের এই সংর্ঘষ পরের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গড়াল কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার, ব্যবসায়ী কিংবা ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ—বিরোধ থামাতে কারও কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না কেন? প্রচণ্ড গরম, অসহনীয় যানজট উপেক্ষা করে নগরের মানুষ রাস্তায় নামে নানা প্রয়োজনে। চলছে পবিত্র রমজান, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কেনাকাটায় ব্যস্ত শহরের বাসিন্দারা। ব্যবসায়ীরাও বছরের বড় এ আয়োজন ঘিরে ব্যস্ত। এমন একসময়ে এই নাগরিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হলো কেন?
নিউমার্কেট ও এর আশপাশের এলাকায় অন্তত ২০টি বিপণিবিতান (মার্কেট) আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, এসব মার্কেটে আছেন লক্ষাধিক ব্যবসায়ী।
দোকানমালিকদের পক্ষে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ঈদের আগে এই জমজমাট ব্যবসার মৌসুমে এক দিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে ক্ষতি দাঁড়াতে পারে শতকোটি টাকা। এত গেল অর্থের হিসাব। এই অঙ্ক নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু এই সংঘর্ষের কারণে যে নাগরিক ভোগান্তি হলো, তার মূল্য নির্ধারণ হবে কীভাবে?
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খাবারের দোকানে গিয়ে বিল না দেওয়া বা কম দেওয়ার ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। এ নিয়ে টুকটাক ঝামেলাও হয়। কিন্তু সুরাহা হয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নয়, এসব যাঁরা করেন, তাঁরা প্রভাবশালী কোনো সংগঠনের আশীর্বাদপুষ্ট। দোকানিদের সঙ্গে বচসার মতো ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে একজোট হয়ে হামলার ঘটনা সাধারণ কয়েকজন শিক্ষার্থীর পক্ষে যে সম্ভব নয়, তা সহজেই বোঝা যায়। সংঘর্ষে জড়িত শিক্ষার্থীদের থামাতে কেউ এগিয়ে আসেননি দুর্ভাগ্যজনকভাবে।