নর্থসাউথের জমি কেনায় ‘ঘুষ দেওয়ার কথা বলতে বাধ্য করা হয়’

আমিন মোহা. হিলালী
আমিন মোহা. হিলালী

আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মোহা. হিলালীকে তুলে নেওয়ার পর জোর করে ঘুষ দেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায় এবং তা ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগের মামলার আসামি আমিন মোহা. হিলালীকে গত শুক্রবার রাতে উত্তরা থেকে তুলে নেওয়া হয়। দুদিন পর রোববার মধ্যরাতে তাঁকে সাভারের হেমায়েতপুরে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এখন তিনি পরিবারের সঙ্গে আছেন।

https://10ms.io/feelRR
বিজ্ঞাপন

অপহরণ বিষয়ে আমিন মোহা. হিলালীর সঙ্গে কথা বলতে তাঁর ভাই রফিকুল ইসলাম হিলালীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর ভাই শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে ফিরে এসে আমিন মোহা. হিলালী পরিবারের সদস্যদের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, আমিন মোহা. হিলালী বলেছেন, শুক্রবার রাত আটটার দিকে উত্তরা থেকে অপহরণের পর প্রায় দুই ঘণ্টা মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হয়। তারপর ছয়–সাত বর্গফুটের একটি কক্ষে তাঁকে রাখা হয়। সেখানে চোখ বেঁধে পাঁচ–সাত দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য জমি বিক্রিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাকে কত টাকা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন, তা জানতে চান অপহরণকারীরা। তিনি যা জানেন, তা বলেছেন। তাঁকে ঘুষের বিষয়টি স্বীকার করতে বলা হয়। তাঁর ১০ আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়।

https://10ms.io/feelRR
বিজ্ঞাপন

নর্থসাউথের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আশালয় হাউজিং থেকে ২৫০ বিঘা জমি কেনা হয়। এর দাম ধরা হয় ৫০০ কোটি টাকা। এই জমি কেনায় বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা এ মামলায় আমিন মোহা. হিলালী ৬ নম্বর আসামি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, এই জমি কেনাবেচায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাকে কত টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে, তা স্বীকারোক্তিতে বলতে বলা হয় তাঁর ভাইকে। তখন তিনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় ভিডিও ধারণা করা হয়েছিল। স্বীকারোক্তিতে ঘুষ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এ সময় তাঁকে বলা হয়, তিনি যেন হাসিমুখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন। তবে কারা তাঁকে অপহরণ ও স্বীকারোক্তি নিয়েছেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

https://10ms.io/feelRR
বিজ্ঞাপন

আমিন মোহা. হিলালীর কাছ থেকে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর ভাইকে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন অপহরণকারীরা। তবে সেখানে কী লেখা ছিল, তা তিনি জানেন না।

তিন বেলা খাবার–চিকিৎসাসেবা

রফিকুল ইসলাম হিলালী জানান, গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে বাসা থেকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের অফিসের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন আমিন মোহা. হিলালী। উত্তরার জমজম টাওয়ার থেকে ১৩ নম্বর সেক্টরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় রাস্তায় পরপর তিনটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। তিনজন তাঁকে কোলে করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলেন। দুই ঘণ্টা পর ছোট্ট কক্ষে রাখা হয়। ওই কক্ষের বাইরে রাখা টেবিল ফ্যান থেকে ভেতরে বাতাস আসত। সেখানে একজন চিকিৎসক মাস্ক পরিহিত অবস্থায় দিনে তিনবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। ওজন মাপা, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করেছেন চিকিৎসক। নিয়মিত ওষুধ দিয়েছেন। তিন বেলা খাবারও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। অপহরণকারীরা আমিন মোহা. হিলালীর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেননি। তাঁদের সবকিছুতে শৃঙ্খলা ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *