ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস
১৪ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে ১০টা। শরতের আকাশ তখন মেঘাচ্ছন্ন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সেই যে পড়তে শুরু করেছে, থামার নাম নেই। গাজীপুর শহর থেকে রিকশায় চেপে রওনা হই ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে। সংক্ষেপে ডুয়েট নামেই সবাই চেনে। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে দেখা গেল, দুজন নিরাপত্তাকর্মী ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসটা প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ করে। তবু মনে হচ্ছিল, কী যেন নেই। যে ক্যাম্পাস সব সময় কোলাহলে মুখর থাকে, এমন নীরবতা কি সেখানে মানায়?
নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, সকালবেলার ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষা—এসব নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। যাঁদের কিছুটা অবসর আছে, তাঁরাও হয়তো বৃষ্টির কারণে কোথাও না কোথাও আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দেখা পেতে ঢুকে পড়ি পুরকৌশল ও যন্ত্রকৌশল অনুষদের ভবনে। ঢুকতেই হাতের ডানে পড়ল পুরকৌশলের ল্যাব। ২০-২৫ শিক্ষার্থী সেখানে পূর্ণ মনোযোগে ক্লাস করছেন। একই দৃশ্য চোখে পড়লে যন্ত্রকৌশল অনুষদে। কথা বলার সময় নেই কারও।
গাজীপুর শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)। ২৩ দশমিক ৪২ একরজুড়ে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়টির চারদিকে সবুজের বেষ্টনী। দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। এখানে গবেষণা ও পড়াশোনা চলছে সমানতালে। তাই তো দেশের আনাচকানাচ থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হয়ে যাঁরা বের হন, প্রায় সবারই লক্ষ্য থাকে ডুয়েটে পড়ার।
করোনাকালীন স্থবিরতার সময়েও ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম থেমে থাকেনি। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫৪৩ শিক্ষার্থী স্নাতক এবং ৩৫ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন।
১২০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার
১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদ হিসেবে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। দেশে ক্রমবর্ধমান আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এই বিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল ও তড়িৎ কৌশল অনুষদের অধীন ৯টি ভিন্ন বিভাগে চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর ডিগ্রি দিচ্ছে। ১৯৮০ সালে ১২০ শিক্ষার্থী নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে পথচলা শুরু। ১৯৮৩ সালে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (ডিইসি) নামে গাজীপুরের বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে সরকারের অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ডিইসিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) ঢাকাতে রূপান্তর করা হয়। সব শেষে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে আত্মপ্রকাশ করে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।