ডার্ক ওয়েব (dark web) কি ? কিভাবে কাজ করে ডার্ক ওয়েব

ডার্ক ওয়েব কি
ডার্ক ওয়েব কাকে বলে

Dark web বা dark net, হলো এমন এক নাম যেটার বিষয়ে প্রায় প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কোনো না কোনো সময় শুনে থাকেন।

বর্তমান সময়ে, আমরা আমাদের প্রায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইন্টারনেট এর মাধ্যমেই করে থাকি।

সেটা হতে পারে, “তথ্য সংগ্রহ”, “অনলাইন শপিং”, “হোটেল বুকিং”, “ভিডিও কল”, “রিচার্জ”, “টাকা ট্রান্সফার করা” ইত্যাদি।

বলতে গেলে, যেকোনো ক্ষেত্রেই আমরা ইন্টারনেটের ওপরে অধিক পরিমানে নির্ভর হয়ে থাকি।

এখন, আপনি হয়তো ভাবছেন যে ইন্টারনেটের বিষয়ে আপনি সবটাই জেনে ফেলেছেন।

মানে, ইন্টারনেট বা ওয়েব এর জগতে যা যা খুঁটি নাটি বিষয় রয়েছে, সবটার বিষয়েই আপনি জানেন বলে ভাবছেন।

তবে, আপনার জেনে অনেক আজব লাগবে যে আমরা সাধারণ ইন্টারনেট এর যতটুকুই পরিমান ব্যবহার করছি,

সেটা সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের কেবল ৪% ভাগ এবং এর বাইরেও ইন্টারনেটের কিছু রহস্যজনক ভাগ বা অংশ রয়েছে।

GoogleYahoo বা অন্যান্য search engine গুলো সম্পূর্ণ ওয়েব এর কেবল ৪% ভাগ কভার করে থাকে।

এর বাইরে, সম্পূর্ণ ওয়েব এর যেই ৯৬% ভাগ রয়েছে সেটার বিষয়ে একজন সাধারণ ব্যক্তি কখনোই জানতে পারেননা।

কেননা, ওয়েব এর সেই ভাগ সাধারণ ব্যক্তির জন্যে সাধারণ ভাবে উপলব্ধ (available) করানো হয়না।

এবং, ওয়েব (web) এর এই ভাগ যেখানে সাধারণ ভাবে প্রবেশ বা এক্সেস (access) করা সম্ভব না, সেটাকেই বলা হয় “ডার্ক ওয়েব“.

এই Dark Web এর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ (illegal) এবং নিষিদ্ধ কাজ গুলো হয়ে থাকে।

যেমন, hacking, online drugs, pornography ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের অবৈধ (illegal) জিনিস গুলো এই ডার্ক ওয়েব এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।

আর তাই, এই ধরণের dark web বা dark website গুলোকে visit করাটাও কিন্তু অপরাধ (illegal) যার জন্যে আপনার ওপরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

তাই, আমার পরামর্শ এটাই থাকবে যে, কখনো ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে গিয়ে এই ধরণের illegal dark websites গুলোতে প্রবেশ করবেননা।

আমার আর্টিকেল এর উদ্দেশ্য, আপনাকে কেবল জানানো যে, “dark web কি”.

ডার্ক ওয়েব কি ? (what is dark web in Bengali)

Dark web, হলো ইন্টারনেটের সেই ভাগ যেটাকে search engine দ্বারা index করা হয়না বা যায়না।

গবেষক দের দ্বারা বলা হয়েছে যে, ইন্টারনেটের কেবল ৪% ভাগ বা অংশ সহজে সাধারণ লোকেদের দ্বারা দেখা বা এক্সেস করা যেতে পারে।

আর, ওয়েব এর এই ৪% ভাগ যেটাকে আমরা সাধারণ ভাবে প্রকাশ্যে (publicly) ব্যবহার করে থাকি এটাকে বলা হয় “surface web“.

এই surface web এর বাইরে সম্পূর্ণ web এর যেই ৯৬% ভাগ রয়েছে সেগুলো হলো “The Deep Web” এবং “Dark Web”.

Dark web এর মধ্যে এমন websites রয়েছে যেগুলো প্রকাশ্যে (publicly) উপলব্ধ করানো হয়না।

এই ধরণের ওয়েবসাইট গুলোর IP address গুলো জেনেবুঝে লুকিয়ে রাখা হয়।

আর তাই, এই ধরণের ওয়েবসাইট গুলো Google বা Yahoo ইত্যাদির মতো search engine গুলোতেও index হতে পারেনা।

Dark web হলো ইন্টারনেটের মধ্যে থাকা কিছু কনটেন্ট বা ওয়েবসাইট, যেগুলো এক আস্তরণ নেটওয়ার্ক (Overlay network).

এই ধরণের network গুলো ইন্টারনেট ব্যবহার অবশই করে থাকে যদিও,

এর মধ্যে থাকা কনটেন্ট / ওয়েবসাইট গুলোকে এক্সেস করার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ software, configurations বা authorization এর প্রয়োজন।

এই ডার্ক ওয়েব এর মাধ্যমে private computer network গুলো বেনামী ভাবে (anonymously) বা নিজের পরিচয় লুকিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

ডার্ক ওয়েব এর ব্যবহার করার জন্যে বিভিন্ন ধরণের anonymity tools এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন, “Tor বা I2P”.

তাহলে সরাসরি যদি বলা হয় তাহলে, ডার্ক ওয়েব মানে হলো –

“এমন কিছু লুকিয়ে থাকা বা রাখা ওয়েবসাইট / কনটেন্ট গুলোর কিছু সংগ্রহ যেগুলোকে publicly access করা সম্ভব না। তবে, কিছু specific web browser এর মাধ্যমেই এই ধরণের ওয়েবসাইট গুলোকে এক্সেস করা সম্ভব।”

ডার্ক ওয়েব এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ইন্টারনেটের anonymous এবং private ভাবে ব্যবহার বা এক্সেস।

আর এটাই কারণ যার ফলে ডার্ক ওয়েব এর মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ (illegal) কাজ গুলো করা হয়।

তাহলে আশা করছি, ডার্ক ওয়েব কি (About Dark Web in Bangla), বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।

ডার্ক ওয়েব এ কিভাবে প্রবেশ করব ?

Dark এর মধ্যে কিভাবে প্রবেশ করবো বা ডার্ক ওয়েব কিভাবে ব্যবহার করতে হয়,

এই দুটো প্রশ্নের উত্তর একটাই।

ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে প্রবেশ করাটা অনেক সহজ এবং সোজা।

ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার এমন একটি বিশেষ ওয়েব ব্রাউজার এর ব্যবহার করতে হবে যেটার মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবসাইট গুলোকে এক্সেস করা সম্ভব।

এরকম একটি web browser এর নাম হলো “Tor browser“.

একবার আপনি এই web browser টিকে নিজের device এর মধ্যে download এবং install করার পর,

একটি সাধারণ web browser এর মতোই এটা কাজ করবে।

আপনাকে ওয়েবসাইট এর URL address দিয়ে দিতে হবে এবং এর পর আপনারা ওয়েবসাইট গুলোকে এক্সেস করতে পারবেন।

ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে নিজের প্রয়োজনের তথ্য বা website গুলো খুঁজে বের করাটা অনেক কঠিন।

কারণ, সাধারণ ওয়েব (surface web) এর সার্চ ইঞ্জিন গুলোর মতো ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে ওয়েবসাইট গুলোর ranking বা indexing এর ব্যবস্থা নেই।

DarkNet Markets কি ?

ডার্কনেট মার্কেট হলো একটি commercial website যেটাকে কেবল Tor বা I2P এর মতো darknets গুলোর মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে।

এই industries বা organization গুলো dark web/net এর মধ্যে পরিচালনা করা হয় বলেই এদেরকে darknet markets বলা হয়।

এগুলো মূলত illegal products এর black market হিসেবে কাজ করে।

সরকার (Government) এবং law enforcement agencies দ্বারা বিরোধ করা প্রত্যেক অবৈধ কাজ এখানে হয়।

Credit card numbers কেনাবেচা করা, drugs, guns, subscription credentials, hacked accounts, hacking software ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ এখানে হয়।

Dark web কিভাবে কাজ করে ?

আমরা ব্যবহার করার সাধারণ ওয়েব এর তুলনায় ডার্ক ওয়েব অনেক আলাদা ভাবে কাজ করে।

কারণ, সাধারণ ওয়েব ব্রাউজার গুলো যেমন, “Google chrome”, “Opera”, “Firefox” ইত্যাদি ব্যবহার করে dark websites গুলোকে access করা যাবেনা।

Dark web এর ওয়েবসাইট গুলোকে access করার জন্যে একটি বিশেষ web browser এর প্রয়োজন যাকে Tor browser বলা হয়।

কেবল TOR এর মাধ্যমেই আপনারা dark web এর website গুলোকে নিজেদের system এর মধ্যে open করতে পারবেন।

এছাড়া, ডার্ক ওয়েবসাইট গুলোর domain extension কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।

সাধারণ ওয়েবসাইট গুলোর ডোমেইন এক্সটেনশন গুলো হলো, “com”, “net”, “org”, “info”, “in” ইত্যাদি।

তবে, ডার্ক ওয়েবসাইট গুলোর এক্সটেনশন হলো “.onion“.

“.Onion” হলো highly encrypted domain name যেটাকে ব্যবহার করা হয় ডার্ক ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে।

এই এক্সটেনশন ব্যবহার করার ফলেই সাধারণ ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন গুলো সঠিক proxy র অবিহনে এই সাইট গুলোকে খুঁজে পায়না।

আসলে এখানে সম্পূর্ণ খেলাটি হলো Tor browser এর।

এটা এমন এক আধুনিক এবং উন্নত ওয়েব ব্রাউজার যেটা নিজের Tor Network এর মাধ্যমে web traffic গুলোকে anonymize করে রাখে।

মানে, জেকেও বেনামে বা গোপিনীয় ভাবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে ওয়েব এক্সেস করতে পারেন এই ব্রাউজার এর মাধ্যমে।

এর ফলে অনলাইনে আপনার পরিচয় লুকানো থাকে।

ডার্ক ওয়েব নিয়ে সতর্কতা

আমি আগেও বলেছি যে, ডার্ক ওয়েব এর সাথে জড়িত ওয়েবসাইট / ডার্ক সাইট গুলোতে যাওয়ার চিন্তাও মনে আনবেননা।

এই আর্টিকেল কেবল আপনাকে ডার্ক ওয়েব এর বিষয়ে তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে।

তবে, আমি কখনো আপনাকে dark web এর মধ্যে প্রবেশ করার পরামর্শ দিবোনা।

কেননা, এই ওয়েব এর মধ্যে মূলত অনেক অবৈধ (illegal) ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে যদি আপনি ভুলেও প্রবেশ করেন, তাহলেও হয়তো সমস্যায় পড়তে পারেন।

কিছু মূল বিষয়ে জ্ঞান না রেখে ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে প্রবেশ করলে, অজান্তে আপনি বিপদে পরবেন।

Viruses 

ডার্ক নেট এর মধ্যে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার device এর মধ্যে virus আক্রমণ করতে পারে।

বিভিন্ন আলাদা আলাদা ধরণের viruses এর ডার্ক সাইট গুলোর মধ্যে থাকতে পারে।

তাই মনে রাখবেন যাতে এই ধরণের ওয়েবসাইট থেকে আপনি কিছু ডাউনলোড না করে থাকেন।

Hackers 

এখানে বিভিন্ন ধরণের hackers রা সক্রিয় থাকতে পারে যারা সহজেই আপনার device hack করার ক্ষমতা রাখে।

ডার্ক ওয়েব এর মধ্যে অনেক hackers forum বা groups রয়েছে যেখান থেকে computer hackers দের hire করা সম্ভব।

আর মনে রাখবেন, এই ধরণের hackers আপনার device কিন্তু সহজেই হ্যাক করতে পারে।

Webcam hijacking 

Dark web এর মধ্যে থাকা যেকোনো ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার ডিভাইস এর মধ্যে থাকা remote administration tool (RAT) এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ পেতে চাইতে পারে।

এবং এর ফলে আপনার ডিভাইস এর মধ্যে থাকা webcam hijacking হয়ে যেতে পারে।

এটা হলে আপনার device এর webcam এর মাধ্যমে hacker আপনার ওপরে নজর রাখতে পারবে তবে আপনি এবিষয়ে বুঝতেও পারবেননা।

Surface web কি ? (What is surface web in Bangla)

সারফেস ওয়েব কে, clear web বা clear net বলেও বলা হয়।

এটা সেই সাধারণ অনলাইন পরিবেশ (world wide web) যেখানে আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন online website গুলো ব্যবহার করে থাকি।

সারফেস ওয়েব হলো সম্পূর্ণ ওয়েব এর সেই অংশ যেখানে ওয়েবসাইট গুলোকে প্রকাশ্যে (publicly) পাবলিশ করা হয়।

উদাহরণ স্বরূপে, Gmail, Facebook, Twitter, online shopping করার জন্যে Amazon বা Flipkart ইত্যাদি।

এখানে প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট / ওয়েব পেজ যেগুলোকে একটি সার্চ ইঞ্জিন (Google, Yahoo ইত্যাদি) দ্বারা খুঁজে পাওয়া এবং ইনডেক্স করা যেতে পারে।

আর, ওয়েব এর এই ভাগ বা অংশকেই clear web বা surface web বলা হয়।

Surface web কে আবার, Visible Web, Indexed Web, Indexable Web বা Lightnet বলেও বলা যেতে পারে।

ডিপ ওয়েব কি ? (What is deep web in Bengali)

সারফেস ওয়েব এর পরে চলে আসে ওয়েব এর সেই অংশ যেটাকে বলা হয় ডিপ ওয়েব (deep web).

এটাকে অনেক সময় invisible web বা hidden web বলেও বলা হয়।

Word wide web (WWW) এর সেই প্রত্যেক কনটেন্ট বা অংশ যেগুলো যেগুলো সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন গুলোর দ্বারা ইনডেক্স করা হয়না বা করা যায়না।

উদাহরণ স্বরূপে, ধরুন আপনি নিজের জিমেইল একাউন্টে লগইন করতে চাইছেন।

এবার, Gmail লিখে গুগলে সার্চ করলে অবশই জিমেইল এর লগইন ওয়েবসাইট পেজ আপনারা দেখতে পারবেন।

কিন্তু, জিমেইল এর মধ্যে নিজের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার পর,

আপনার email dashboard/ inbox/ content কিন্তু কেবল আপনি দেখতে পারবেন।

জিমেইল এর সেই ভাগ কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন এর মধ্যে index বা display করা হয়না।

তাই, এটাকেই বলা হয় deep web যেখানে ওয়েবসাইটের বা ওয়েব এর কিছু অংশ লুকানো থাকে এবং যেটাকে কেবল ইউসার দ্বারা এক্সেস করা সম্ভব।

এভাবেই, আপনার online banking accounts এর web page অবশই ডিপ ওয়েব এর আরেকটি উদাহরণ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *