গোপনে রাশিয়ার তেল কিনছে ইউরোপের দেশগুলো
![গোপনে রাশিয়ার তেল কিনছে ইউরোপের দেশগুলো](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-03%2Ff094d7ec-797d-41c4-a9ef-4242b5ec545f%2FX2VGJ2IHUNLX5EHR4VBVST4JWY.webp?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
রাশিয়ার তেলবাহী ট্যাংকারগুলো ইদানীং রহস্যজনক আচরণ করছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার বন্দর ছাড়ার সময় তাদের গায়ে নাকি লেখা থাকছে, গন্তব্য অজানা। অনেক জাহাজ আবার মাঝপথে স্রেফ উধাও হয়ে যাচ্ছে।
টিএফআই গ্লোবাল ডট কমের সংবাদের তথ্যানুসারে, পশ্চিমা দেশগুলো এখনো রাশিয়ার তেল কিনছে। অথচ ভারত রাশিয়ার তেল কেনার কারণে এই পশ্চিমা দেশগুলোই সবক দিয়েছিল।
এই যে গন্তব্য অজানা কথাটা জাহাজের গায়ে লেখা থাকছে তার অর্থ হলো, এই তেল গভীর সমুদ্রে বড় কোনো জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ রাশিয়ার তেল নিজ পরিচয় লুকাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অন্যান্য দেশ যেমন ভেনেজুয়েলা ও ইরান এভাবে তেল বিক্রি করত।
তবে গন্তব্য আদতে অজানায় নয়—এই তেল ইউরোপে ঢুকছে বলেই জানা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, বরং নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। তবে রাশিয়ার তেল নিলে ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়, আর পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলো তা নষ্ট করতে চায় না। কিন্তু জ্বালানির বাজারের যে অবস্থা, তাতে পশ্চিমা দেশগুলো লুকিয়ে-চুরিয়ে রাশিয়ার তেল কিনছে।
তেলের ট্যাংকারের গন্তব্যের খোঁজখবর রাখে ট্যাংকার ট্র্যাকার ডট কম নামের এক ওয়েবসাইট। তাদের তথ্যানুসারে, এপ্রিল মাসে প্রতিদিন রাশিয়া থেকে গড়ে ১৬ লাখ ব্যারেল তেল অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।
এই কাজ করতে গিয়ে রুশ জাহাজগুলো নতুন কৌশল ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। যাত্রা শুরুর পর একপর্যায়ে তারা ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দিয়ে নজরদারি ব্যবস্থা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। মার্চ মাসের তথ্যানুসারে, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এ ধরনের তৎপরতা অন্তত ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সমুদ্রপথের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি উইন্ডওয়ার্ডের প্রধান নির্বাহী অ্যামি ড্যানিয়েলে বলেন, রুশ তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর প্রবণতা অনেকটা বেড়েছে। এভাবে তারা নিজেদের অবস্থা গোপন করে তেল রপ্তানি করে যাচ্ছে। মার্চ মাসে ১২ তারিখেই কেবল ৩৩টি জাহাজ ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে রপ্তানি করেছে, আগের সপ্তাহের চেয়ে যা ২৩৬ শতাংশ বেশি।
জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাইস্টাড এনার্জির তথ্যানুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরের পাঁচ সপ্তাহে প্রতিদিন ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উধাও হয়ে গেছে।
রাশিয়ার তেল কেন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বছরের মধ্যে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করতে চায়। শুধু তা-ই নয়, ২০২৭ সালের মধ্যে তারা রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে চায়।
কিন্তু এভাবে গোপনে তেল আমদানি করে ইউরোপ নিজের কথার বরখেলাপ করছে। অনেকে আবার এ ঘটনার সঙ্গে পরকীয়ার মিল পাচ্ছেন। ইউরোপ যত কথাই বলুক না কেন, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর তারা অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তারা জ্বালানির ২৭ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করে।
অন্যদিকে রাশিয়ার তেলের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে। তথ্যানুসারে, এপ্রিল মাসে রোমানিয়া, এস্তোনিয়া, গ্রিস ও বুলগেরিয়া রাশিয়া থেকে দ্বিগুণ তেল আমদানি করেছে। আর ইউরোপে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় গ্রাহক নেদারল্যান্ডসও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি করেছে।
মূলত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো গোপনে কম দামে রাশিয়ার ক্রুড
অয়েল কিনছে।