খাল–নালায় পড়ে তলিয়ে যায় মানুষ, তাই ভয়ে ভয়ে পথচলা
![খালের ওপর লোহার পাতের সেতু দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদপুর এলাকায়](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-06%2Fb05cf588-b948-4c9b-b42b-c31c1bc829b9%2FCtg_risk_01.jpeg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
চট্টগ্রাম নগরের উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে শিশুসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয় গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদের পা পিছলে মুরাদপুরে চশমা খালে পড়ে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। ছালেহ আহমেদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
নগরের উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গাফিলতিকে দায়ী করা হয়েছে সরকারি এক তদন্ত প্রতিবেদনে। তবে এরপরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। নগরের বিভিন্ন এলাকার খাল ও নালার নানা অংশ এখনো উন্মুক্ত।
বৃহস্পতিবার আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া, চাক্তাই, ফিরিঙ্গীবাজার, কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, মেহেদিবাগ, চটেশ্বরী মোড় ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার নালার বেশির ভাগ অংশে স্ল্যাব নেই। খালে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনী। বর্ষা শুরু হওয়ায় উন্মুক্ত খাল ও নালা নিয়ে নগরবাসীর মনে ভয় আরও বেড়েছে।
নগরের বহদ্দারহাটের নতুন চান্দগাঁও থানার মোড়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল। মোড়ের এক পাশে নালা। টানা বৃষ্টিতে নালা আর সড়ক পানিতে একাকার হয়ে যায়। সড়ক-নালা কোনোটিকেই আলাদা করার সুযোগ থাকে না। তখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে নগরবাসী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন পথচারী সিরাজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির পানিতে সব একাকার হয়ে যায়। বোঝার উপায় থাকে না কোথায় নালা, কোথায় সড়ক। নালার ওপর সব জায়গায় স্ল্যাবও নেই। যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
![নালাতে নেই স্ল্যাব। তাই ফুটপাতে চলাচল করতে পারছে না মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের মেহেদিবাগ এলাকায়](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-06%2F0c2d9282-d285-4389-a9e9-1f3d2f91e8c3%2FCtg_risk_02.jpeg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
পশ্চিম বাকলিয়ার রূপনগর এলাকায় গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় সাফোয়ান আস সাফার সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁর বাসার পাশেই নালা। নালার পাশে সড়ক। বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সড়কে হাজারো মানুষ চলাচল করে। সকালবেলা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যায়। অনেক সময় নালায় পড়ে আহত হন পথচারীরা।
অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাক্তাই খালের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া করেন। খাললাগোয়া সরু সড়কে প্রতিনিয়ত রিকশা, মিনিট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। তবে খালের বড় অংশ এখনো অরক্ষিত। খাল আর সড়কের মধ্যে কোনো বিভাজক বা বেষ্টনী নেই। বর্ষায় খালটি ফুলেফেঁপে ওঠে। তখন ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষায় চাক্তাই খালে পানি বেড়ে যায়। খালের পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় পথচারীদের।
গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে নগরের একাধিক এলাকা। তাই উন্মুক্ত খাল ও নালা নিয়ে নগরবাসীর মনে ভয় আরও বেড়েছে। নালা–খালে পড়ে হতাহতের ঘটনাগুলো তাঁদের মধ্যে এই ভয় ধরিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের ৩০ জুন নগরের মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। ৬ ডিসেম্বর চশমা খালের ষোলোশহর তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন। তিন দিন পর নগরের মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে খালটির কোনো স্থানেই এখনো নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়নি।
![পশ্চিম বাকলিয়া লিজা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নালাতে নেই স্ল্যাব। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চান্দগাঁও থানার সামনে](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-06%2F85ff4264-ad07-4ec1-9462-52d11d07b24d%2FCtg_risk_03.jpeg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। এরপর ওই নালায় স্ল্যাব বসানো হয়েছে।
নগরের উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে একাধিক মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)—কেউ এর দায় নেয়নি। এসব মৃত্যুর জন্য উল্টো পরস্পরকে দায়ী করে আসছে সংস্থা দুটি। সংস্থা দুটির ভূমিকায় চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন মৃত্যুর জন্য দুটি সংস্থার গাফিলতিকে দায়ী করা হয়েছে।