কেমন ছিল সত্তর আশি নব্বই দশকের বইমেলা

আশির দশকে বইমেলা

আশির দশকে বইমেলা

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে বদলেছে অমর একুশে বইমেলার পরিবেশ ও পরিধি। সামান্য কয়েকটি বইয়ের দোকান নিয়ে যখন মেলা হতো সে সময়ের স্মৃতি আছে অনেক পাঠকের মনে। স্বাধীনতা–পরবর্তী সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে নিয়মিত বইমেলায় আসা তিনজন সাহিত্যানুরাগী প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছেন বইমেলা ঘিরে তাদের স্মৃতির ঝাঁপি।

বইমেলা নিয়ে নিঘাত ইয়াসমিনের একটা মন খারাপ করা স্মৃতি আছে। আশির দশকের মাঝামাঝি এক দিন মেলায় ঢুকেই দেখলেন, তরুণ লেখক–পাঠকেরা একজন মানুষকে ঘিরে জড়ো হয়েছেন। বিটিভিতে তখন ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটক হয়। ভিড়ের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে, মানুষের মুখে শুনে যা বুঝলেন, সবাই লেখক হুমায়ূন আহমেদের অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। তাঁরও ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল একটা অটোগ্রাফের। লজ্জায় চাইতে পারেননি। বহু দিন আগের বইমেলার কথা মনে হলে তখনকার সাদামাটা দোকান, অল্প টাকা নিয়ে আসা ক্রেতা, চশমা পরা পাঠক, আর নিরহংকারী লেখকদের কথা মনে পড়ে। তখন মেলায় কেউ কেউ নিজের লেখার অংশবিশেষ পাঠ করতেন, কেউ কবিতা পড়তেন। এসব গল্পের সঙ্গে মিশে আছে ৬৫ বছর বয়সী নিঘাত ইয়াসমিনের তরুণ বয়সের স্মৃতিও।

১৯৭৭ সালে বিয়ের পর নিঘাত ইয়াসমিন বাংলা সাহিত্যে স্নাতক করেছেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। পুরোদস্তুর গৃহী এই নারীকে পাঠ্য হিসেবে পড়তে হয়েছে চর্যাপদ। বড় মেয়েকেও চর্যাপদ পড়তে শিখিয়েছেন। সে মেয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পুরোনো দিনের বইমেলা নিয়ে নিঘাত ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বললেন, তাঁর মা রওশন জাহান রহমান ছিলেন লেখিকা ও সমাজকর্মী। বাসায় বই পড়ার চল ছিল খুব। আর সে সময় তো টেলিভিশনে এত চ্যানেল ছিল না। বই-ই ছিল আশ্রয়।

আশির দশকে নিয়মিত বইমেলায় ঘোরাঘুরি করা নিঘাত ইয়াসমিন এখন নাতিকে সঙ্গে নিয়ে যান মেলায়
আশির দশকে নিয়মিত বইমেলায় ঘোরাঘুরি করা নিঘাত ইয়াসমিন এখন নাতিকে সঙ্গে নিয়ে যান মেলায়

নিঘাত ইয়াসমিন বিয়ের পর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। সেই আশির দশকে প্রতি বছরই মেলায় যেতেন। তখন সাধ্য আর শখ অনেক সময়ই মিলতো না। যত বই কিনতে মন চাইতো তত কিনতে পারতেন না। সেই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ‘মেলায় গিয়ে বইপত্র নাড়াচাড়া করতাম, নতুন বই এর গন্ধ শুকতাম। তারপর যা কিছুই কিনতে পারতাম তা নিয়ে দুই জন মনের আনন্দে বাসায় ফিরতাম। কোনো কোনো দিন কিছু না কিনে শুধু ঘুরতাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *