একাত্তরে ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি শরণার্থী কলেরায় মারা যায়
১৯৭১ সালে কলেরায় ৩ লাখ ১৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শরণার্থীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি ছিল ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। নতুন এক গবেষণায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শরণার্থীশিবিরে কলেরায় মৃত্যুর এই তথ্য জানা গেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শরণার্থীশিবিরে মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়। আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে এই বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের ভূমিকা ও অবদান নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম। তাঁদের গবেষণার শরণার্থীশিবিরের অংশটুকু আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন খায়রুল ইসলাম।
খায়রুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলেন এক কোটি শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল—এই তথ্য ভারত সরকারের। বাস্তবে এই তথ্য ছিল জাতিসংঘের। ১৯৭২ সালের ১১ আগস্টের জাতিসংঘের একটি দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বলেছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫।
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঢুকে স্থানীয় মানুষকে যেমন সংখ্যালঘুতে পরিণত করে, ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের কিছু কিছু এলাকায়। উদাহরণ হিসেবে খায়রুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় বাসিন্দা ছিল ৫১ হাজার, অথচ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার শরণার্থী। এই বাড়তি মানুষের চাপ পড়েছিল স্বাস্থ্যে, বিশুদ্ধ পানিসহ নানা ক্ষেত্রে।
গবেষকেরা জানান, তাঁরা ভারতের বিভিন্ন উৎস ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। মৃত্যু নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি ব্যবহার করেই তাঁরা একাত্তর সালে ভারতের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে কলেরায় অনুমিত এই মৃত্যুর সংখ্যা পেয়েছেন (৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৯ জন)।
আজকের এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকেরের হাতে ভারতের হাসপাতালগুলোতে ওই সময় ব্যবহৃত শিরায় দেওয়া স্যালাইনের একটি কাচের বোতল তুলে দেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল। বোতলটি স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করবে জাদুঘর।