আমাদের ভবিষ্যৎ ও তিন চোরের কারবার

তিন চোরের কারবার ও আমাদের ভবিষ্যৎ

পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের চোখের দৃষ্টি ২০৫০ সালের মধ্যে কমে আসবে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে পড়বে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি হয়ে পড়বে অন্ধ। এটি বিজ্ঞানীদের অনুমান। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। তাঁরা বলছেন, পৃথিবীতে এখনই অন্ধ না হলেও দিনকানাদের রাজত্ব চলছে। বর্তমানের বাইরে তাঁরা কিছু দেখতে পারেন না। পৃথিবীর মানুষ ও জীবকুল মহা তিনটি বিপদের দিকে ছুটে যাচ্ছে। স্বল্পদৃষ্টির মানুষের কাজে-কর্মে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি স্বল্পদৃষ্টির সভ্যতা ডেকে আনে নিজেরই ধ্বংস।

দূর ভবিষ্যতের চিন্তা আমাদের সময়ের সঙ্গে বেমানান। মধ্যযুগের মানুষ বরং আরও দূরদর্শী ছিল। মিসরের পিরামিড, চীনের কিংবা বিখ্যাত ইউরোপীয় ক্যাথেড্রালগুলো কোনোটার নির্মাণই এক প্রজন্মে শেষ হয়নি। কোনো কোনো কীর্তির জন্য তো শতাব্দীও লেগে গেছে। কিন্তু আমরা কয়েক বছরের বেশি ভাবতে চাইছি না।

তিন ফলার বিপদ
পৃথিবীর দুই হাজার ধনীদের হাতে চলে গেছে মোট সম্পদের অর্ধেকটা। পৃথিবীতে শ্বেতাঙ্গ ২০ ভাগ দেশ বাকি ৮০ ভাগ অশ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ধনী। অর্থাৎ পৃথিবীর গরিবেরা সবাই কালো বা বাদামি। গরিব দেশের কতিপয় অতিধনীদের হিসাব নিয়ে লাভ নেই, তাঁরা ধনী দেশেই ঠিকানা বানাচ্ছেন, পরিবার পাঠাচ্ছেন আর পাচার করছেন তাঁদের সম্পদ। এদের সামলানো না গেলে সামনের দশকগুলোতে বিকট বৈষম্যের শিকার হবে অধিকাংশ মানুষ।

দ্বিতীয়ত, বৈষম্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, কাটা পড়ছে নাগরিক অধিকার। বৈষম্য আর স্বৈরাচার মিলিয়ে দুই দুইয়ে চার নয়, ২৪ রকম অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি করছে।

তৃতীয়ত, পুঁজিবাদ আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। বাস্তবে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল নীতিটা হলো এ রকম, পৃথিবী ও মানবজাতি ধ্বংসযোগ্য কিন্তু পুঁজিবাদ অমর। প্রকৃতির ইচ্ছেমতো ক্ষতি সামষ্টিক আত্মহত্যার মতো দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন নতুন সংস্করণ আসতেই থাকবে। কোনো অলৌকিক উপায়ে মহামারি বিদায় নেবে না। তা ছাড়া যেভাবে অরণ্যের নির্জনতা ও সমুদ্রের গভীরতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে, মেরুর বরফ যেভাবে গলছে, যেভাবে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তাতে করে সুপ্ত অনেক রোগ-জীবাণু জেগে উঠছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা গণবিধ্বংসী যুগের মাঝামাঝি জায়গায় চলে আসছি। এই ধারায় চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। ধনীরা না হয় রকেটে করে মঙ্গলে বা অন্য কোনো গ্রহে চলে যাবেন, কিন্তু শত শত কোটি সাধারণ মানুষকে তো আর সেভাবে নেওয়া সম্ভব হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *