আত্মহত্যার ‘মহামারি’ ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত আমরা
আত্মহত্যা ঠেকাতে হলে পরিবার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক সমমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি
খুব ভোরে চিলের ডাক, শামুকের ডিম, জলে ভাসা হিজল, বেলি ফুলের মালা, শূন্য আর অনন্তের ধারণা, গীতা ঘটকের কণ্ঠে ‘ও চাঁদ’, চা দিয়ে বাকরখানি, নিজের জমানো টাকা বাবাকে দেওয়া—এ বিষয়গুলো যে কারও কাছে সামঞ্জস্যহীন বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকার মঞ্চে সৈয়দ জামিল আহমেদের নাটক বিস্ময়কর সবকিছু যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছে এটা বিস্ময়ের কিছু নয়। এগুলোর একেকটি একেকজন মানুষের জীবনের পাওয়া বিস্ময়। নাটকটিতে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন নাট্যকার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, বিশেষ করে করোনার দিনগুলোয় আত্মহত্যার আরেক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পড়াশোনা শেষ করা বেকার, কাজ হারানো ব্যবসায়ী, দিনমজুর, সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারা মা-বাবা থেকে শুরু করে অল্পবয়সী শিক্ষার্থী—প্রায় সব বয়স ও শ্রেণির মানুষ আত্মহত্যার দীর্ঘ মিছিলে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, করোনাকালে দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, আত্মহত্যা বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আশঙ্কাজনক তথ্য আছে—মোট আত্মহত্যাকারীর ৮৩ শতাংশেরই বয়স ৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
শিশু-কিশোর ও তরুণেরা সমাজের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অংশ। তাদের অনেকে এখনো জীবনটাকে শুরুই করতে পারেনি, এর আগেই নিষ্ঠুর পরিণতি বরণ করে নিতে হচ্ছে। সম্প্রতি জামালপুর ও ময়মনসিংহের দুটি আত্মহত্যার ঘটনা আলোচিত হয়েছে। দুজনেই কিশোরী, দশম শ্রেণিতে পড়ত। মেলান্দহের কিশোরী আত্মহত্যার আগে চিরকুট লিখে রেখে জানায়, সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। তার ধারণা হয়েছিল, সে বেঁচে থাকলে মা-বাবার মানসম্মান নষ্ট হবে। ময়মনসিংহের কিশোরী আত্মহত্যার আগে তার ফেসবুকে ইংরেজি ও বাংলায় বড় একটি পোস্ট শেয়ার করে। তাতে সে তার পরিবারকে আত্মহত্যা করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। লিখেছে, তার মরার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বাধ্য হয়েছে। পরিবারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ সহ্য করতে পারেনি সে। যদিও পরিবার জানিয়েছে, বয়ঃসন্ধিকালের বিষণ্ণতায় ভুগছিল ওই কিশোরী। তাঁর চিকিৎসা চলছিল।