অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে অনলাইন দুনিয়া
করোনাকালে আমাদের অনলাইনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা থেকে শুরু করে ঘরের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। নিজেদের ঘর বা অফিসের কাজের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা যতটা সচেতন, তেমনভাবে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন নই। এ জন্য শিশুদের শেখানোর আগে অভিভাবকদের অনলাইনে নিরাপদ থাকার কৌশল জানতে হবে।
কাজকে সহজ করার জন্য ইন্টারনেটে অনেক অ্যাপস ও সফটওয়্যার রয়েছে। এ সফটওয়্যার বা অ্যাপসগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করতে না জানলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা, ভুয়া বার্তার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এসব তথ্য জানার পাশাপাশি সন্তানদেরও সচেতন করতে হবে। তবে অনলাইন বিষয়ে ধারণা কম থাকায় অনেক অভিভাবকই সন্তানের অনলাইন কার্যক্রম ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না। কারণ, কিছু অভিভাবকের নতুন প্রযুক্তির বিস্তারিত তথ্য জানার বিষয়ে অনীহা রয়েছে। ফলে বাস্তব জীবনে শিশুদের নিরাপদে রাখতে মনোযোগী হলেও অনলাইনে তাদের গতিবিধি নজরদারি করা আর হয়ে ওঠে না তাঁদের। বাইরে ঘোরাঘুরি না করে ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহারকে উৎসাহিতও করেন অনেক অভিভাবক। এ জন্য অনেকে শিশুদের ইন্টারনেট সংযোগসহ ট্যাবলেট, কম্পিউটার বা স্মার্টফোনও কিনে দেন। করোনা মহামারির সময় এ ছাড়া কোনো বিকল্পও ছিল না তাঁদের কাছে। তবে এসব যন্ত্র সঠিক নিয়মে ব্যবহারের কৌশল জানা না থাকলে সমস্যা হয় অভিভাবক ও শিশুদের। এ জন্য নতুন প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিপণ্য সম্পর্কে নিজে জানার পাশাপাশি শিশুদের শেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানাতে হবে।
একটু অসচেতনতার কারণে অনলাইনে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সমস্যা সমাধানে নিজে অনলাইন দুনিয়ায় নিরাপদ থেকে সন্তানদেরও নিরাপদ রাখতে হবে। এ জন্য অভিভাবকদের প্রথমেই অনলাইন-বিশ্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে। জানতে হবে, অনলাইনে শিশুরা কোন ধরনের কাজ করতে বেশি পছন্দ করে। এ জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ না দিয়ে শিশুদের সঙ্গে অনলাইনে কী কী কাজ করা যায়, তা খেলার ছলে আলোচনা করা উচিত। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অভিভাবকদেরও পাশে থাকা প্রয়োজন। এতে শিশুরা অনলাইনে কোন বিষয়ে তথ্য খুঁজছে বা তাদের আগ্রহের বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, অ্যাপ ইনস্টল করতে হলে মুঠোফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে প্রায় সব তথ্যই জানার অনুমতি দিতে হয়। ফলে কম্পিউটার বা মুঠোফোনে থাকা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিওর পাশাপাশি তাদের পছন্দ-অপছন্দ, শখ, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি চলে যায় বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে। এ জন্য সাইবার হামলার বিষয়ে নিজেরা জেনে সন্তানদেরও সচেতন করতে হবে। এ বিষয়ে শিশুদের ভয় না দেখিয়ে তাদের নিরাপদ থাকার পদ্ধতি মেনে চলার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে অভিভাবকদের।
শিশুদের অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা দেওয়া মানেই ভালো অভিভাবক, ব্যাপারটা তেমন নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে শিশুদের নির্দিষ্ট বিধিনিষেধের মধ্যে বড় করা হয়, তারা অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করে বড় হয়। তাই সন্তানের অনলাইন কার্যক্রম থেকে কোনোভাবেই দূরে থাকা যাবে না। অভিভাবকদের আগ্রহ ও সম্পৃক্ততাই সন্তানের জন্য ইতিবাচকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিবেশ গড়ে তুলবে।
অনলাইনে পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সেসব জানাতে হবে শিশুদের। নিজের ও অন্যদের ছবি অনলাইনে দেওয়া ঠিক হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে শিশুদের। এমনকি খাবার বা ঘুমানোর সময় মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ভালোমন্দ নিয়ে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করলে অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুদের দূরত্ব কমবে। ফলে শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের কাছে নিজেদের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরবে।