ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এই বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তি দিল ডিবি

ফারদিন নূর
ফারদিন নূর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর হত্যা মামলার তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা পর্যায় থেকে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হলেও এখন তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দাবি করেছে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।

এক মাসের বেশি সময়েও ফারদিন হত্যা মামলা তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর ফারদিনের লাশ পাওয়ার পর ময়নাতদন্ত করেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফারদিনের পুরো মাথার বিভিন্ন অংশে আঘাত পাওয়া গেছে। বুকের ভেতরে আঘাতের চিহ্ন আছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, এটি অবশ্যই হত্যাকাণ্ড।

তবে ডিবি এখন বলছে, তারা ফারদিনের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গেও একাধিকবার কথা বলেছে। ভিসেরা প্রতিবেদন পেলে চিকিৎসকেরা পূর্ণাঙ্গ মতামত দেবেন। সংস্থাটির দাবি, ফারদিনের মাথায় খুব সামান্য আঘাত ছিল, এ আঘাতের কারণে অজ্ঞান হতে পারেন। কিন্তু মৃত্যু হবে না বলে মৌখিকভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। গণমাধ্যমের সামনে চিকিৎসক মাথায় অসংখ্য আঘাতের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আঘাত থাকলে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসত। সুরতহাল প্রতিবেদনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

ডিবি যুক্তি হিসেবে পারিবারিক চাপ, দুই ভাইয়ের পড়াশোনার টাকা জোগানো, ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে স্পেনে যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করতে না পারাকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে বলে আমরা তাঁর মাকে অবহিত করেছিলাম। আমরা ঘটনার পর বুয়েটের শিক্ষক, সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ফারদিনের পড়াশোনা, পরীক্ষার ফল সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কাজী নূর উদ্দিন কয়েক দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফারদিন ছিল সংগ্রামী, অদম্য মেধাবী, যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলতে পারত। ও নিজে নিজেকে প্রস্তুত করেছে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। ফারদিনের বাবা দাবি করে আসছিলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা মামলা করেন। মামলায় ছেলের এক বন্ধুকে আসামি করেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন।